বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন এবং নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে তৎপর থাকবেন বিদেশি কূটনীতিকেরা। যেকোনো দেশের নির্বাচনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে সহযোগিতা করার রেওয়াজ রয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এর বিপরীত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো।
আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতিসংঘের ঢাকা কার্যালয়ের সঙ্গে ডিক্যাব টক-এর আয়োজন করে কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিক্যাব। এতে অংশ নিয়ে সাংবাদিকেদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ঢাকায় জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো।
নির্বাচন কমিশন গঠনে জাতিসংঘ কি আগের মতো এবারও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপেরে উদ্যোগ নেবে—এমন প্রশ্নের উত্তরে মিয়া সেপ্পো বলেন, ‘নির্বাচনের সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যেকোনো দেশে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যোগাযোগ করে থাকে। আর সেটি বাংলাদেশেও হবে। সেটি জাতিসংঘের মাধ্যমেও হতে পারে বা যেকোনো দেশের রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমেও হতে পারে। আগের থেকে এবার আলাদা কিছু হবে বলে আমি আশা করি না।’
প্রসঙ্গত, প্রায় ৫ বছর আগে তৎকালীন ঢাকার জাতিসংঘ আবাসিক সমন্বয়কারীর নেতৃত্বে চার-পাঁচটি দেশ নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপের জন্য চিঠি দিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করলে সেপ্পো বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কিছু ক্ষেত্রে জাতিসংঘের উদ্বেগ রয়েছে। বিশ্বে ও বাংলাদেশের নারীদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও বৈষম্য নিয়ে জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন। বৈশ্বিকভাবে নাগরিকদের স্বাধীনতা কমে আসাও আমাদের উদ্বেগের কারণ। আমরা আশা করি জাতিসংঘের ইউনিভার্সেল পিরিয়ডিক রিভিউয়ের যে সুপারিশগুলো করা হয়েছিল, বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে, পরিস্থিতির উন্নয়ন বা বৈষম্য কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সেগুলো সংসদে আলোচনায় নিয়ে আসবে বাংলাদেশ।
বেশ কয়েক বছর ধরে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য সংস্থাগুলো গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, বৈষম্যসহ নানা ইস্যুতে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করে আসছে। বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে তিনি বলেন, আইনটি আন্তর্জাতিক মানের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এর প্রয়োগ নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এর পর্যালোচনায় সহযোগিতা করতে জাতিসংঘ প্রস্তুত, যাতে করে এর অপব্যবহার কমে আসে।
ভাসানচরে কাজ করা নিয়ে সরকারের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান সেপ্পো। বিশ্বব্যাংকের প্রস্তাব অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের সমাজে একীভূত করা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি ছিল। এখানে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের সমাজে একীভূত করার জন্য নয়, বরং সামাজিক সুসঙ্গতির কথা বোঝানো হয়েছে। বৈশ্বিকভাবে বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘ শরণার্থী নিয়ে একই জায়গায় অবস্থান করে। তবে সেটি যখন বাংলাদেশের মতো কোনো একক দেশের স্থানীয় পর্যায়ে আসে, তখন তা আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হয়।
এ সময় বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা সংকটটি বিশ্বের কাছে অগ্রাধিকার থাকার চ্যালেঞ্জের কথাও তুলে ধরেন তিনি। চলতি বছর রোহিঙ্গা অর্থায়নের চাহিদার মাত্র ৪০ শতাংশ এখন পর্যন্ত এসেছে বলেও জানান তিনি।
আলোচনায় বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সামনের দিনের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে সেপ্পো জানান, সমুদ্রে পানি বাড়ার কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ ভূমি ডুবে যাবে।