সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে রাষ্ট্রপতির এই সংক্রান্ত নির্দেশনার বিষয়টি আজ রোববার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে জানানো হয়।
গত বছরের ২০ অক্টোবর থেকে বিচারকাজ থেকে বিরত রাখা ১২ বিচারপতির মধ্যে মো. আখতারুজ্জামানও রয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ইতিপূর্বে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল কর্তৃক বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের বিষয়ে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রেরিত তথ্যাবলির নিরিখে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬ (৫) (বি) অনুসরণ করে রাষ্ট্রপতি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক, বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের নিকট নির্দেশনা প্রেরণ করেছেন।
এর আগে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খিজির হায়াতকে অপসারণ করেছে সরকার। সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের দফা (৬) মোতাবেক রাষ্ট্রপতি তাঁকে গত ১৮ মার্চ থেকে অপসারণ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে গত বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে আইন ও বিচার বিভাগ।
সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩ তম গ্রেড) মুক্তিযোদ্ধাসহ বিদ্যমান কোটা বাতিলসংক্রান্ত ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের ওই বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াত। তাঁদের রায়ের পর কোটা ফিরে চাকরিতে। বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে গত বছরের ৫ জুন রায় দেওয়ার পর থেকেই আন্দোলনের ডাক দেয় শিক্ষার্থীরা। যা ছড়িয়ে পরে সারা দেশে। ওই আন্দোলনের একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়।
আওয়ামী লীগের ‘ফ্যাসিস্ট’ বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে গত বছরের ১৬ অক্টোবর হাইকোর্ট ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
অন্যদিকে হাইকোর্ট বিভাগের ‘দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ’ বিচারপতিদের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী আইনজীবী সমাজ। আর ফ্যাসিবাদের দোসর বিচারপতিদের অনতিবিলম্বে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটির লিগ্যাল উইং। আন্দোলনরে মুখে হাইকোর্ট বিভাগের ১২ বিচারপতিকে প্রাথমিকভাবে কোনো বেঞ্চ দেওয়া হচ্ছে না বলে ওই দিন জানান সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমদ ভূঞা। এরপর থেকে ১২ জনকে আর বেঞ্চ দেওয়া হয়নি। ওই ১২ জনের মধ্যে ছিলেন বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান।
গত বছরের ৭ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পরে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে এবং কাউন্সিলের বৈঠকও হয়েছে। সেখানে কয়েকজন বিচারপতির বিরুদ্ধে ওঠা নানা অনিয়মের অভিযোগ যাচাই–বাছাই হচ্ছে বলে জানানো হয়।
এরপর ৪ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানায়, কয়েকজন বিচারপতির আচরণের (কনডাক্ট) বিষয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রাথমিক অনুসন্ধান চলছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে যথেষ্ট অগ্রগতিও হয়েছে বলেও জানানো হয় সুপ্রিম কোর্ট থেকে।