সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, তাঁর স্ত্রী, কন্যাসহ আওয়ামী লীগের সাবেক তিন এমপির দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গত দেড় বছরে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর নামে সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত ১৬ হাজার কোটি টাকা তারা আত্মসাৎ ও লুটপাট করেছেন।
আজ শনিবার দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। ইতিমধ্যে উপপরিচালক নুরুল হুদার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ছাড়াও অন্য ছয় অভিযুক্তের মধ্যে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী কাশমেরী কামাল, মেয়ে নাফিসা কামাল, ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য বেনজীর আহমেদ ও ফেনী-৩ আসনের সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী।
দুদক সূত্রটি জানায়, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সরকার নির্ধারিত ৭৯ হাজার টাকা ফি থাকলেও অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নামে থাকা রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো প্রায় সাড়ে চার লাখ বিদেশগামী প্রত্যেক শ্রমিকের কাছ থেকে চার থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা করে রেখেছে। সব মিলিয়ে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত ১৬ হাজার কোটি আদায় করেন।
সূত্রটি আরও জানায়, গত দেড় বছরে বাংলাদেশ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) মালয়েশিয়াগামী প্রায় সাড়ে চার লাখ কর্মীর ছাড়পত্র প্রদান করেছে। ভেরিটে ইনকরপোরেটেডসহ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পাঁচটি গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে।
সূত্রটি জানায়, সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর মালিকানাধীন স্নিগ্ধা ওভারসিজ গত দেড় বছরে মালয়শিয়ায় প্রায় আট হাজার কর্মী পাঠিয়েছে। লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর ফাইভ এম ইন্টারন্যাশনাল পাঠিয়েছে ৮ হাজার ৫৯২ জন শ্রমিক, বেনজীর আহমেদের আহমেদ ইন্টারন্যাশনাল পাঠিয়েছে ৭ হাজার ৮৪৯ জন শ্রমিক। কামালের স্ত্রী কাশমেরী কামালের অরবিটালস এন্টারপ্রাইজ পাঠিয়েছ ৭ হাজার ১৫২ জন শ্রমিক ও তাঁর মেয়ে নাফিসা কামালের অরবিটালস ইন্টারন্যাশনাল পাঠিয়েছে ২ হাজার ৭০৯ জন শ্রমিক।
চলতি বছরে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের অনেকেরই দুর্বিষহ, মানবেতর ও অমর্যাদাকর পরিস্থিতির বিবরণ ওঠে আসে।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, এই চক্রের নেতৃত্ব দেন বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন ওরফে স্বপন। মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং সিন্ডিকেটও নিয়ন্ত্রণ করেতেন বায়রার এই শীর্ষ নেতা। স্বপনের মালিকানাধীন রিক্রটিং এজেন্সি ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল গত দেড় বছরে মালয়েশিয়ায় ৭ হাজার ১০২ শ্রমিক পাঠান। ঢাকা উত্তরের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. শফিকুল ইসলামের বিএম ট্রাভেলস দেশটিতে ৭ হাজার ২২৫ জন শ্রমিক পাঠায়। মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদের রিক্রুটিং এজেন্সি পাঠিয়েছ ২ হাজার ৬০০ কর্মী।
দুদকের তদন্ত–সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে জানান, ক্যাথারসিসসহ অন্তত এক ডজনের বেশি এজেন্সির বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুদকের অনুসন্ধান করছে। তবে নানামুখী চাপের কারণে মুস্তফা কামাল, নিজাম হাজারীর মতো হাই প্রোফাইল মন্ত্রী-এমপিদের সংশ্লিষ্টতা থাকার বিষয়টি সামনে আসেনি।