অর্চি হক, ঢাকা
শৈশবে রূপালী রানী সরকারের স্বপ্ন ছিল, পড়াশোনা করে একদিন স্বাবলম্বী হবেন, পরিবারের ব্যয় মেটাতে মা-বাবার পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু কৈশোর পেরোতে না পেরোতেই সেই স্বপ্ন ভেঙে দেয় বাল্যবিবাহ। ২০১৪ সালে বিয়ের পর বাবার বাড়ি সাতক্ষীরার কলারোয়া ছেড়ে চলে যেতে হয় সদর উপজেলার গাভা গ্রামে।
নতুন পরিবারে এসে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পুরোনো সেই স্বপ্নটা আবার উঁকি দিতে থাকে রূপালীর মনে। বিয়ের কিছুদিন পরেই করোনায় চাকরি হারান স্বামী। রূপালী খেজুরপাতার ঝুড়ি বোনা শিখেছিলেন। সেই দক্ষতা আঁকড়ে ধরেই সংসার চালানোর লড়াইয়ে নামলেন তিনি। বেসরকারি সংস্থা ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের (বিটিএস) সহযোগিতায় ৬ জন অংশীদার নিয়ে গড়ে তোলেন রূপালী হ্যান্ডিক্রাফটস।
আজকের পত্রিকাকে রূপালী বলেন, ‘একটা সময় মনে হতো, কাজ শিখি কী লাভ হলো! পুঁজি নাই, কাঁচামাল নাই। আর এই গ্রামের এক কোনায় কে কিনতি আইসবে খেজুরপাতার ঝুড়ি। তখন বিটিএসের সাহায্য পাই।’
রূপালী হ্যান্ডিক্রাফটসের গ্রামীণ নারী কর্মীরা খেজুরপাতার ঝুড়ির পাশাপাশি খাবারের ট্রে, টিফিন বক্স, লন্ড্রি ঝুড়ি, অলংকার বাক্স, ঢাকনাওয়ালা ঝুড়ি ও শোপিস তৈরি করেন।
রূপালী তাঁদের কাজের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা বায়ারের (ক্রেতা) অর্ডার মতো ঝুড়ি বানিয়ে দিই। আমরা যদি সরাসরি রপ্তানিকারকের কাছে বিক্রি করতে পারতাম, তাহলে আরেকটু বেশি আয় হতো।’
গ্রামীণ এই নারী উদ্যোক্তাদের প্রসঙ্গে ব্রেকিং দ্য সাইলেন্সের পরিচালক (প্রোগ্রাম অ্যান্ড প্ল্যানিং) জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের একটা প্রকল্পের আওতায় গ্রামের গৃহবধূ ও তরুণীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। তাঁদের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।’
দেশের গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে আছে রূপালী রানী সরকারের মতো অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা এবং হস্তশিল্পী। প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অভাবে তাঁদের অনেকের দক্ষতা ও কাজ থেকে যায় অন্তরালে। এমন প্রেক্ষাপটেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। দেশের বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদ্যাপন জাতীয় কমিটি দিবসটি পালন করে থাকে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘দুর্যোগে নারীর সুরক্ষায় দরকার সচেতনতা সৃষ্টি’।