—বাবা আমাকে টাকা দিয়েছে, আর স্বাধীনতা দিয়েছে।
—তাই নাকি! তাহলে যাও, যা ইচ্ছা কিনো। বাসায় গিয়ে ঘ্যানঘ্যান করবে না একদম।
কথা হচ্ছিল মা আর মেয়ের মধ্যে। পাশে দাঁড়িয়ে হাসছিলেন বাবা। মা–মেয়ের এই কথোপকথন চলছিল অমর একুশে বইমেলার শিশু চত্বরে। শিশুটির হাতে বাবার দেওয়া টাকা আর মুখে রাজ্যের খুশি। সাবধানে ছোটাছুটি করতে বলায় মেয়ে মাকে বলছিল, বাবা তাকে টাকা দিয়েছে বই কেনার জন্য। এখন সে তার মনের মতো বই কিনে বাড়ি ফিরবে। সেখানে মা যেন কোনো বাধা না দেন।
বইমেলার শিশু চত্বরটি আজ শনিবার সরব ছিল বেলা ১১টা থেকে। শিশুরা অপেক্ষা করছিল সিসিমপুরের চরিত্রগুলোকে মুখোমুখি দেখবে বলে। অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে মঞ্চে আসে ইকড়ি, শিকু, হালুম ও টুকটুকি। তারা পরে আবার আসে বিকেল সাড়ে ৩টায় ও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়।
শিশুরাও বিভিন্ন কর্নার ঘুরে বই কেনে মহা আনন্দে। ছড়া, কবিতা, ছবি আঁকার বই, বর্ণ পরিচয়, পপ আপ বুকস, শোলা বুকস—এসব শিশুদের জন্য সাজিয়ে বসেছে শিশুতোষ প্রকাশনীগুলো। এই দুই দিন ভূতের গল্প, ছড়া আর বর্ণ পরিচয়ের বইগুলোই বেশি বিক্রি হয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট প্রকাশনীর লোকজন।
শিশুতোষ বই প্রকাশনী ঝিঙে ফুলের বিক্রয়কর্মীরা জানান, শিশুরা বেশি কিনছে ভূতের গল্প আর রূপকথা। তারা ইউটিউবে যে গল্পগুলো দেখছে সেই বইগুলো কেনার আগ্রহ বেশি দেখা যাচ্ছে। এই প্রকাশনীতে শিশুদের জন্য ইশপের গল্প, রূপকথার গল্প, হাসির গল্প, ভূতের গল্পের বই পাওয়া যাচ্ছে।
প্রগতি পাবলিশার্সে পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পপ আপ বুকস। এর মধ্যে আছে টম অ্যান্ড জেরির গল্প, খরগোশ ও কচ্ছপের গল্প, মহাকাশের নানা তথ্য সমৃদ্ধ গল্প, ডাইনোসরের গল্প। এ ছাড়া বিভিন্ন পশু পাখির আকৃতিতে তৈরি করা হয়েছে কিছু বই। যেখানে আছে সেই পশু পাখিগুলো নিয়ে নানা তথ্য ও মজার গল্প। এ ছাড়া বেশ কিছু স্টলে আছে শোলা বুকস। শিশুদের জন্য এই বইগুলো বেশ তথ্য সমৃদ্ধ।
শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে আছে বিভিন্ন কুইজ ও পাজলের বই। কিছু স্টলে পাওয়া যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে শিশুদের উপযোগী বই। বইগুলো সাজানো হয়েছে ছোট ছোট ঘটনার ওপর ভিত্তি করে।
মেয়ের জন্য বই কিনতে মেলায় এসেছেন তাবাসসুম মুনিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিবারই চেষ্টা করি আমার সন্তানদের শুক্র বা শনিবারে মেলায় নিয়ে আসার। সিসিমপুরের আয়োজন ওদের পছন্দ। বইও কেনে টুকটাক। আমি প্রতিবারই পুরোনো ছড়ার বই খুঁজে বেড়াই। আর শিশুরা তো সেই ভূত, পেত্নী আর অ্যাডভেঞ্চারের গল্প খোঁজে। আমি বাধা দেই না, পড়লে সমস্যা নেই। তবে আমার কেনা বইগুলোও ওরা পড়ে।’