অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘ফ্যাসিস্ট এবং তাদের দোসরেরা বাদে আজকে সব রাজনৈতিক দল এসেছে। নানা মত-পথ ও আদর্শের ভিন্নতা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব, স্বাধীনতা এবং মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছে।’
আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংলাপের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘সবাই একটা কথা বলেছে যে আমাদের এখন আর শক্তিহীন, নতজানু, দুর্বল ভাবার কোনো রকম কোনো অবকাশ নাই। যেকোনো ধরনের অপপ্রচার ও উসকানির বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব এবং আমরা আমাদের ঐক্য অটুট রাখব। ভবিষ্যতে এ রকম অপপ্রচার হলে, উসকানি আসলে ঐক্য দিয়ে আমরা তা মোকাবিলা করব।’
‘একটা প্রস্তাব এসেছে, আমরা গোটা জাতি ভারতের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রয়েছি। এ জন্য আমরা সবাই মিলে একটা সমাবেশ করতে পারি কি না—পলিটিক্যাল কাউন্সিল করতে পারি কি না। এই সভার মূল সুর ছিল আমাদের মধ্যে মত, পথ, আদর্শের ভিন্নতা থাকবে। কিন্তু দেশ, সার্বভৌমত্ব এবং অস্তিত্বের প্রশ্নে আমরা সবাই এক, সবার ওপরে দেশ। এ থেকে আমরা কখনো বিচ্যুত হব না। বাংলাদেশকে শক্তিহীন, দুর্বল, নতজানু ভাবার কোনো অবকাশ নেই, এই বার্তা জানিয়ে দিতে বলা হয়েছে।’
আইন উপদেষ্টা বলেন, ভারতে বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে সংলাপে। একই সঙ্গে ভারতের এমন তৎপরতার বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে আরও শক্তিশালী ভূমিকা প্রত্যাশা করা হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়। যোগাযোগ ও আইনগত দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শও দেন রাজনৈতিক নেতারা।
আসিফ নজরুল বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যত চুক্তি হয়েছে গত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে, সেগুলো প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে রামপালসহ বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর যেসব চুক্তি হয়েছে, সেগুলো বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। বাংলাদেশের ওপর ভারতের অর্থনৈতিক নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর বিষয়ে নিন্দা জানানো হয়েছে। ভারতকে বাংলাদেশের প্রতি মর্যাদাশীল প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। যেকোনো উসকানির মুখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখার কথা জানান।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি, পার্শ্ববর্তী দেশের যে মিথ্যাচার—এসব বিষয়ে বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষায় রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বিজয়ের মাসে আমাদের সবার প্রত্যয়, দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এই সরকারের দায়িত্ব।
‘দেশের বিরুদ্ধে আজকের পতিত সরকার বিদেশে বসে যে ষড়যন্ত্র করছে, যারা তাদের সহযোগিতা করছে, তাদের বিরুদ্ধে সবাই কিন্তু ঐকমত্য প্রকাশ করেছে। এই যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, এটা বাংলাদেশের জনগণের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির জন্য অপচেষ্টা হচ্ছে। আমরা সরকারের সঙ্গে একমত হয়েছি যে আমরা যেভাবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরিয়েছি, একইভাবে সবাই মিলে এসব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করব।
‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের বলেছেন জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার জন্য। তিনি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আজকে রাজনৈতিক দলগুলো যারা আমরা উপস্থিত ছিলাম, সবাই জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য একমত হয়েছি।’
নির্বাচন নিয়ে কিছু বলেছেন কি না জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই সরকার জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বলেছি অতিদ্রুত সংস্কার সাধন করে নির্বাচনের জন্য একটি রোডম্যাপ দিন। রোডম্যাপ পেয়ে জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে গেলে যেসব ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তখন আর কেউ তা করতে সাহস পাবে না।’