নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপত্তা আইন (পারসোনাল ডেটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট) নামে নতুন আরেকটি আইন তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত এই আইনের প্রাথমিক খসড়া তৈরি করেছে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিক খসড়ায় বলা হয়েছে, সম্মতি নিয়ে যেকোনো ব্যক্তির তথ্য সরকার নিতে পারবে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারবে। পুরো বিষয় নিয়ন্ত্রণ করবেন সরকারের নিয়োগ দেওয়া একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তাঁর অধীনে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তথ্য সংগ্রহের কাজ করতে না পারলে এ দায়িত্ব তৃতীয় কোনো পক্ষকে দিয়ে করাতে পারবেন। আবার তথ্য সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা মহাপরিচালক বা কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি সরল বিশ্বাসে কারও ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করে থাকেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো আদালতে কোনো ব্যবস্থা, মামলা, বিচার বা অন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।
আইনটির প্রাথমিক খসড়ার শুরুতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং তথ্য সংগ্রহ, ব্যবস্থাপনা, ব্যবহার ও সংরক্ষণ করতে ব্যক্তিগত সুরক্ষা আইনটি করতে যাচ্ছে সরকার। এতে সরকার চাইলে ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করতে পারবে। তবে সে ক্ষেত্রে ব্যক্তির চিন্তার স্বাধীনতা, ব্যক্তির মর্যাদা রক্ষা করবে।
নতুন আইনের ব্যাপারে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে তিনি অন্য একটি সংবাদমাধ্যমের কাছে আইনটি তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন।
খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো কারণে যদি ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয় বা কোনো অসংগতি দেখা দেয়, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে মহাপরিচালকের কাছে অভিযোগ করতে হবে। তবে এর কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী তথ্য ফাঁস করলে ভুক্তভোগী ক্ষতিপূরণ পাবেন।
দেশের সার্বভৌম ও অখণ্ডতা রক্ষা, নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও বন্ধুরাষ্ট্রের জন্য সরকার চাইলে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার মহাপরিচালককে প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দেশাবলি দিতে পারবে। আর মহাপরিচালক সেই নির্দেশনা মানতে বাধ্য থাকবেন। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, গুগল, টুইটার, আমাজনসহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে সার্ভার স্থাপন করতে হবে। যাতে বাংলাদেশি নাগরিকদের তথ্য বাংলাদেশেই থাকে।
এ আইনের আওতায় কোনো প্রতিষ্ঠান অপরাধী হয়ে থাকলে, অপরাধ সংঘটনের সময়ে সেই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত সবাইকে এবং প্রতিষ্ঠানকে দোষী সাব্যস্ত করা হবে। এর অধীনে করা অভিযোগ আমলযোগ্য এবং জামিন অযোগ্য।
এ রকম আইন করলে তা ফেসবুক বা গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান কতটুকু মানবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তথ্য ও প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর জোহা। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো হয়তো নতুন আইনের কারণে বাংলাদেশে তাদের সেবা বন্ধ করে দেবে।
খসড়ায় ব্যক্তিগত তথ্যের বাইরেও প্রয়োজনে স্পর্শকাতর তথ্য নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। স্পর্শকাতর তথ্যগুলো হলো, জাতিগত, ধর্মীয়, দর্শনগত ও অন্যান্য বিশ্বাস, রাজনৈতিক মতাদর্শ, রাজনৈতিক দলের সদস্যপদ, ট্রেড ইউনিয়ন, সংগঠন, বায়োমেট্রিক অথবা জেনেটিক ডেটা অথবা ব্যক্তির স্বাস্থ্য ও যৌনজীবন বিষয়ে তথ্য।