৫ আগস্ট সশস্ত্র সংগ্রামের ভিডিও বার্তা দিয়ে রেখেছিলেন বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ নাসিব হাসান রিয়ানের স্মরণে দোয়া ও আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্ট অর্থাৎ ৩৬ জুলাই আমরা একটা ভিডিও করে বের হয়েছিলাম, ভিডিওতে আমি বলেছিলাম যে, আজ যদি কোনো গণহত্যা হয় বা ম্যাসাকার হয়, তাহলে আমাদের সশস্ত্র সংগ্রামের আহ্বান থাকবে। আমরা ফিরে নাও আসতে পারি আপনারা লড়াই চালিয়ে যাবেন। একটা ভিডিও করে আমি কিছু সাংবাদিককে দিয়ে এসেছিলাম। যদি আজ আমি না ফিরি, আজ আমাদের বিজয় অর্জন না হয়, তাহলে এটাই আমাদের শেষ বার্তা। আমরা প্রত্যেকেই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত ছিলাম এবং এখনো আছি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত সকল শহীদ ও আহতদের স্মরণ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নিয়েই আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। একটা নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমরা লড়াই করেছি, রক্ত দিয়েছি। আমরা এমনভাবে রাষ্ট্রকাঠামো পুনর্গঠন করতে চাই যেন ফ্যাসিবাদ আর ফিরে আসতে না পারে।’
শহীদ নাসিব হাসান রিয়ান প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘সে ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে রাজপথে নেমেছে। মৃত্যুভয়কে তুচ্ছ করে সে আন্দোলনে অংশ নিয়েছে।’
এই আন্দোলনে শহীদ নাসিবের পিতার অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, নাসিব যখন লাঠি হাতে আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন নাসিবের বাবা তাঁর ছেলের হাতের লাঠি পরিবর্তন করে শক্ত লাঠি তুলে দিয়েছেন। নাসিবের বাবার মতো অনেক অভিভাবক এভাবে আন্দোলনে উৎসাহ জুগিয়েছেন।
আন্দোলনে নিজের অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, ‘আমিও পরিবারের বাধা উপেক্ষা করে আন্দোলনে অংশ নিয়েছি।’
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রমাণক সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এসব প্রমাণক বারবার প্রচার করতে হবে, তা না হলে অনেকে আন্দোলনের ইতিহাস ভুলে যাবেন।’
উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের দায়িত্ব নেবে সরকার। এই আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের পরিবার ও আহতদের প্রতি সকলের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।’ তিনি শহীদ পরিবার ও আহতদের পাশে থাকার জন্য সরকারি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
আলোচনাসভায় আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শহীদ নাসিব হাসান রিয়ানের বাবা ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. গোলাম রাজ্জাক। সভায় তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ নাসিব হাসানের অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে নাসিব হাসান রিয়ান দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। মৃত্যুভয় তাকে আন্দোলনে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি। শহীদ নাসিবের স্বপ্ন ছিল পাইলট হওয়া; কিন্তু সেই স্বপ্ন আর বাস্তবায়ন হলো না। সে দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। শহীদ নাসিবের বাবার বক্তব্যের সময় অনুষ্ঠানস্থলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।’
বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক ও সিনিয়র সহকারী সচিব মো. আব্দুল খালেকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন—জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ ও বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ এস. এম. আব্দুল হালিম।
আলোচনা শেষে শহীদ নাসিব হাসান রিয়ানসহ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
গত ৫ আগস্ট ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন নাসিব হাসান রিয়ান। তিনি ঢাকার মিরপুরের বিসিআইসি কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।