হোম > জাতীয়

অর্ধলাখ বেকার, বন্ধ চার হাজার কিন্ডারগার্টেন

শহীদুল ইসলাম, ঢাকা

ঢাকার রামপুরার কিন্ডারগার্টেনটি বন্ধ করে নিজ গ্রামের মসজিদে ইমামতি করেন আবুল কালাম সিকদার। মেহেরপুরের শাফিউর রহমান সুরুজ কিন্ডারগার্টেন বন্ধ করে দিয়ে এখন পান-সিগারেট বিক্রি করেন। বাবার হাতে গড়া স্কুলটি আরও বড় করার স্বপ্ন দেখা আনোয়ার হোসেন সুমন স্কুল বন্ধ করে দিয়ে চাকরি খুঁজছেন।

কালাম, সুরুজ আর সুমনদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে করোনায়। বাংলাদেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বন্ধ রয়েছে কিন্ডারগার্টেনগুলো। এর মধ্যে স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে অন্তত ৪ হাজার কিন্ডারগার্টেন। এর কারণে স্থায়ী বেকার হয়েছেন ৫০ হাজারের বেশি লোক। আর স্কুল খোলার বিষয়টি অনিশ্চিত হওয়ায় দেশের ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেনের মধ্যে আরও অনেকগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধের পথে।

তবে দেশে কিন্ডারগার্টেনের প্রকৃত সংখ্যা কত বা এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কত লোক জড়িত, তার কোনো হিসাব সরকারের কাছে নেই। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘কিন্ডারগার্টেনগুলো এখনো স্বাধীনভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এগুলোতে আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। শিক্ষা আইন হলে এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের অধীনে আসবে।’

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবমতে, দেশে ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেনে প্রায় ৬ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। আর বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের তথ্যানুযায়ী, দেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬০ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে পৌনে ১ কোটি শিশু পড়াশোনা করে। 
মাত্র কয়েক হাজার কিন্ডারগার্টেনকে নিবন্ধন দিয়েছে সরকার। বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন না থাকায় দেশে এ ধরনের কত প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেই তথ্য সরকারের কারও কাছে নেই।

দেশের সব কিন্ডারগার্টেন সংগঠনকে নিয়ে গড়া কিন্ডারগার্টেন ও সমমান স্কুল রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব জাহাঙ্গীর কবির রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁদের জরিপ অনুযায়ী গত ১৫ জুন পর্যন্ত সারা দেশে ৪ হাজার ২১০টি কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়েছে। আরও অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধের পথে। 
কিন্ডারগার্টেন সংগঠনগুলোর হিসাব অনুযায়ী, একেকটি প্রতিষ্ঠানে গড়ে ১২ জন করে শিক্ষক-কর্মকর্তা রয়েছেন। সেই হিসাবে এসব প্রতিষ্ঠানের ৫০ হাজার ৫২০ জন শিক্ষক-কর্মচারী বেকার হয়েছেন।

ঢাকার কাজীরবাগে আইডিয়াল প্রি-ক্যাডেট হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মো. শাহজাহান মিয়া। এই বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষকও তিনি। শাহজাহান বলেন, ‘২৫ বছর টিউশনি করিয়েছি, এরপর স্কুলটা দিই। স্বপ্ন ছিল এটিকে অনেক বড় করব। এলাকার বাচ্চারা সেখানে পড়াশোনা করবে, গরিব লোকের সন্তানেরাও খরচ ছাড়া পড়বে।’
গত বছরের মার্চে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার পর কয়েক মাস স্কুল খোলার অপেক্ষায় ছিলেন শাহজাহান। কিন্তু স্কুল খোলার কোনো ঘোষণা না আসায় ভাড়া বাসা ছেড়ে পরিবার নিয়ে স্কুলে উঠেছেন তিনি। শাহজাহান বলেন, ‘স্কুল বন্ধ হওয়ার পর থেকে স্কুল গেটে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে শাড়ি, কাপড়, লুঙ্গি ও গামছা বিক্রি করছি। এখন স্কুলেই থাকি। স্কুল ভবনের জন্য মাসে ২৫ হাজার টাকা করে ভাড়া দিতে হচ্ছে।’

শাহজাহানের ছেলে আনোয়ার হোসেন সুমন বাবার স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। স্কুলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে শঙ্কিত সুমন এখন চাকরি খুঁজছেন। 

মেহেরপুরের বড়বাজার গড়পুকুর এলাকায় রোজ ডেল কিন্ডারগার্টেন চালাতেন শাফিউর রহমান সুরুজ। তিনি বলেন, ‘স্কুলটাকে নিয়েই আমার জীবনে সবকিছু ছিল। এখন আর কিছুই নেই, সবই শেষ। খেয়ে–পরে বেঁচে থাকার জন্য এখন কত কিছুই না করছি।’ সুরুজ জানান, তাঁর কিন্ডারগার্টেনে সাড়ে তিন শ শিক্ষার্থীকে পড়ানোর দায়িত্বে ছিলেন ১৬ জন শিক্ষক। এখন ১৭টি কক্ষ ছেড়ে দিয়ে শুধু অফিস কক্ষটি রেখেছেন। বিক্রি করে দিয়েছেন চেয়ার, টেবিল ও বেঞ্চ।

মো. আবুল কালাম সিকদার আরও দুজনের সঙ্গে মিলে রামপুরার বাগিচারটেকে ইকরা আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্থাপন করেন। তিনি গত বছরের মার্চে স্কুল বন্ধ হলে জুলাইয়ে স্কুল ভবন ছেড়ে দেন। এরপর চলে যান গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার মাটিভাঙ্গা গ্রামে। এখন এই গ্রামের একটি মসজিদে ইমামতি করেন। স্কুলের অন্য দুই প্রতিষ্ঠাতাও নিজেদের গ্রামের বাড়ি ভোলা ও ঝালকাঠিতে চলে গেছেন।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, সারা দেশে ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। মহামারির মধ্যে বেশির ভাগের অবস্থা বেশ করুণ।

বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী  বলেন, ৯৯ শতাংশ কিন্ডারগার্টেন ভাড়া বাড়িতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাড়িভাড়া দিতে না পেরে বেশির ভাগই ভবন ছেড়ে দিয়েছে। আসবাব বিক্রি করে দিয়েছে।

কিন্ডারগার্টেন ও সমমান স্কুল রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব জাহাঙ্গীর কবির রানা বলেন, তাঁদের জরিপ অনুযায়ী সারা দেশে ৪ হাজার ২১০টি কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়েছে, আরও অনেকগুলো বন্ধের পথে।

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে আর্থিক সংকটে পড়ে যেসব কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে, সেসবের শিক্ষার্থীদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে নির্দেশ দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর জানান, বন্ধ হওয়া স্কুলের শিক্ষকেরা অর্থকষ্টে আছেন। অনেকেই বাধ্য হয়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। কেউ ভ্যান-অটো চালাচ্ছেন, কেউ ফল বিক্রি করছেন, কেউ মুদিদোকান দিয়েছেন, কেউ কাপড় বিক্রি করছেন। সবাই কোনো না কোনোভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘করোনার মধ্যে যেসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তার শিক্ষার্থীদের আমরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। ফলে কোনো শিক্ষার্থীই শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে থাকবে না। আমরা লক্ষ করছি, করোনার মধ্যেও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বেড়েছে।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে রিভিউ শুনানি ৯ ফেব্রুয়ারি

রাজনীতিতে ঢুকতে চাই না, প্রধান উপদেষ্টার টাইমফ্রেমে কাজ করছি: সিইসি

রাজধানীর অপরাধজগতে নেতা-সন্ত্রাসীতে আঁতাত

ঢাকাকে ভারতের চোখে দেখার সম্ভাবনা কম

নবীন উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা শুনলেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের পাকিস্তান সফর, প্রতিরক্ষা সচিবের সঙ্গে বৈঠক

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সরানো হলো পরিচালক মনিরুজ্জামানকে

গত বছর ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, ৬১ শতাংশই নারী: জরিপ

পাঁচ মাসে মাজার-দরগায় ৪৪ হামলা: প্রেস উইং

বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস গ্রেপ্তার

সেকশন