২০ রমজানের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন শ্রমিক নেতারা। তবে অধিকাংশ কারখানাই সেই দাবি পূরণ করেনি। ঈদের আর বাকি মাত্র ১১ দিন। অথচ এখনো ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন বকেয়া ৭৬ পোশাক কারখানার শ্রমিকদের, যা বিজিএমইএর আওতাভুক্ত মোট কারখানার সাড়ে ৩ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে আবার বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ঈদের বোনাসের সঙ্গে সঙ্গে চলতি মাসের (মার্চ) ১৫ দিনের বেতন দিতে বলেছে।
শ্রমিকেরা জানান, বেতন বকেয়া রয়েছে এমন কারখানার সংখ্যা কম হলেও ২৫ মার্চের মধ্যেই তাঁরা বকেয়া বেতন ও বোনাস পরিশোধ চান। এবং মালিকপক্ষ থেকে বেতন ও বোনাস বকেয়া থাকবে না বলে তাঁদের আশ্বাসও দিয়েছে। তাঁদের বিশ্বাস, মালিকপক্ষ তাদের কথা রাখবে।
তৈরি পোশাক কারখানার মালিকেরা বলছেন, অধিকাংশ কারখানাই বকেয়া বেতন দিয়েছে। কিছু ছোট কারখানা রয়েছে, যারা নানা কারণে সমস্যাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তারা বেতন দিতে পারেনি। তবে ঈদের আগেই শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন ও বোনাস পাবেন।
ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমইবি) ডিজিটাল মানচিত্র অনুযায়ী, দেশে ৩ হাজার ৫৫৫টি রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে। তবে বিজিএমইএর তালিকাভুক্ত চালু কারখানার সংখ্যা ২ হাজার ১০২। এর মধ্যে গতকাল বুধবার পর্যন্ত হিসাবে দেখা যায়, ২ হাজার ৩১ কারখানা বা ৯৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ কারখানা ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন দিয়েছে। বেতন দেয়নি ৭৬টি।
বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক মো. আতিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যে সমস্ত কারখানার শ্রমিকেরা বেতন পাননি, তাঁরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। আমরা চেষ্টা করছি, ২৫ তারিখের মধ্যে শতভাগ কারখানার ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস আদায় করতে। গত মঙ্গলবার এক বৈঠকে মালিকপক্ষ আমাদের এমন ওয়াদা দিয়েছে। আশা করছি, তারা তাদের কথা রাখবে।’
এদিকে ঈদের আগে শ্রমিকদের বোনাস ছাড়াও চলতি মাসের ১৫ দিনের বেতন দিতে হবে বলে কারখানার মালিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে বিজিএমইএ। একই সঙ্গে সুযোগ থাকলে ঈদের দুই-তিন দিন আগে ছুটি দিতে কারখানার মালিকদের অনুরোধ করে সংগঠনটি।
বিজিএমইএর মহাসচিব মো. ফয়জুর রহমান এক নোটিশে জানিয়েছেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে শ্রম পরিস্থিতি এবং শিল্প খাতের শ্রমিকদের মজুরি, বোনাস ও ছুটিসংক্রান্ত বিষয় পর্যালোচনার জন্য ৬ মার্চ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ঈদের আগে পোশাকশিল্পের শ্রমিক-কর্মচারীদের মার্চ মাসের কমপক্ষে ১৫ দিনের মজুরি দিতে হবে। ফলে সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে কারখানার মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানান সংগঠনের মহাসচিব।
বিজিএমইএর এই ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত চালু কারখানাগুলোর মধ্যে মাত্র ২৪০টি কারখানা বোনাস দিতে পেরেছে। আর ১০টি কারখানা চলতি মার্চ মাসের বেতন দিয়েছে। জানা যায়, গত ৬ মার্চ যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তার বাস্তবায়ন অগ্রগতি জানতে গত মঙ্গলবার ত্রিপক্ষীয় আরেকটি বৈঠক হয়। সেখানে কারখানার মালিকেরা বকেয়া বেতন বিষয়ে কথা বলেন। যাঁরা এখনো বেতন দেননি, তাঁরা খুব শিগগিরই বেতন দেবেন বলেও জানান।
বিজিএমইএ সদস্য ও রেনেসাঁ গ্রুপের পরিচালক মো. সাইফুল আলম বলেন, ‘মালিকেরা চান ভালো শ্রমিকদের ধরে রাখতে। তাই তাঁরা চেষ্টা করেন ঠিক সময়ে বেতন দিয়ে দিতে। তবে বর্তমানে নানা সমস্যায় রয়েছে ছোট ও মাঝারি কারখানাগুলো। তাই হয়তো কিছু কারখানা বেতন দিতে পারেনি। তবে ঈদের আগে তাদেরও বেতন হয়ে যাবে।’