হোম > জাতীয়

সংবিধানের অস্তিত্ব নেই, প্রোক্লেমেশন না হলে বিপদ: বিচারপতি আব্দুর রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২১: ৫১
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমান দাবি করেছেন, ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বিপ্লবের ঘোষণাপত্র না আসায় দেশ বিপদের মধ্যে রয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় নাগরিক কমিটির সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল উইং এর আয়োজন করে।

‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত: জুলাই ঘোষণাপত্র, গণপরিষদ ও সংবিধান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমান।

এ এফ এম আব্দুর রহমান বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশেই বিপ্লবের পর বিপ্লবী পরিষদ হয়। সেই বিপ্লবী পরিষদ তার ক্ষমতা নেয় একটি প্রোক্লেমেশনের মাধ্যমে। বিপ্লব কিন্তু সংবিধান মেনে হয় না। পৃথিবীতে যত বিপ্লব হয়েছে, সেই বিপ্লব একটি নতুন লিগ্যাল অর্ডার তৈরি করেছে। সেই লিগ্যাল অর্ডারের যে ভিত্তিভূমি, তা সমূলে গ্রহণ করতে হয় প্রোক্লেমেশন অব রেভল্যুশনের মাধ্যমে। প্রোক্লেমেশন অব রেভল্যুশন সেই বিপ্লবী পরিষদকে ক্ষমতা দেয়। সেই প্রোক্লেমেশনের পক্ষে থাকে সমস্ত জনগণ। কিন্তু এই প্রোক্লেমেশনটা আমাদের এখনো ঘোষণা করা হয়নি। এটা ঘোষণা না করায় যে কত বড় বিপদ রয়ে গেছে, সেটা আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) এখনো খেয়াল করছেন না কেন? বর্তমান সংবিধান দিয়ে চলছেন আপনারা। সংবিধানের কোনো অস্তিত্ব নেই।’

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, এবি পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার প্রমুখ।

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমান বলেন, সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদবলে আপিল বিভাগ থেকে একটি মতামত নিয়েছেন। ১০৬-এ কি বলা হয়েছে? এমন আইনগত প্রশ্ন উত্থাপন হয়েছে, যা রাষ্ট্রপতি মনে করছেন, আপিল বিভাগ থেকে মতামত গ্রহণ করা আবশ্যক। বিপ্লব কি আইনের প্রশ্ন? যে সরকারকে আমরা ঝেঁটিয়ে বিদায় করেছি, সেই বিপ্লব কি আইনের প্রশ্ন? তাহলে কিসের ভিত্তিতে আইনের এমন প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে? যা ১০৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে মতামত দিতে হবে? ১০৬-এর কোনো ভিত্তি নেই।

তিনি বলেন, ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে যারা ২১ বছর পর এসে ফেলে দিয়ে শত শত লোককে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে, তারা যদি আবার ক্ষমতায় আসতে পারে, তাহলে কি আপনাদের ফাঁসি দেবে না কি আদর করবে? ফাঁসিতে ঝোলাবে।’

ফাঁসিতে যাতে ঝোলাতে না পারে, এটা আমাদের চিন্তা করতে হবে। ৮ আগস্ট থেকে সব কর্তৃপক্ষকে বলছি, প্রোক্লেমেশন করেন। না হলে বিপদ আছে। তাদের ধারণা, ১০৬ অনুচ্ছেদ ভিত্তি। ১০৬ ভিত্তিভূমি নয়। সুতরাং প্রোক্লেমেশন হতে হবে।

এ এফ এম আব্দুর রহমান বলেন, একটা সরকার পরিবর্তন হয় কীভাবে? নিয়মিত ও অনিয়মিত—দুইভাবে। নিয়মিত পরিবর্তন হলো নির্বাচনের মাধ্যমে। আর অনিয়মিত পরিবর্তন হয় তিনভাবে—আন্দোলন, অভ্যুত্থান ও বিপ্লব। আন্দোলন তখনই হয়, যখন একটি সরকারকে পরিবর্তন করার জন্য বিরোধী দল ও জনগণ মিলে রাস্তায় আন্দোলন করে। সেই আন্দোলনকে সম্মান দেখিয়ে সরকার পদত্যাগ করে নির্বাচন দেয়।

আরেকটি পরিবর্তনের উপায় হচ্ছে সামরিক অভ্যুত্থান। এটি বহুবার দেখেছি। আরেকটি হচ্ছে বিপ্লব। বিপ্লব হচ্ছে এমন একটি স্বৈরাচারকে হটানো। সমগ্র দেশের জনগণ যখন রাস্তায় নেমে এসে রক্তাক্ত অথবা অন্য কোনোভাবে একটা স্বৈরাচারকে টেনে নামায়, সেটাকে বলে বিপ্লব।

তিনি আরও বলেন, ‘গত ৫ আগস্ট বিপ্লব আমরা দেখেছি। ৫ আগস্ট যে সরকারের পতন হয়েছে, সেটা ছিল একটা গোখরো সাপ। সমগ্র জাতিকে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে এই সাপ ১৬ বছর ধরে চুষে চুষে খেয়েছে। সেই সাপটাকে আমরা ছাড়িয়েছি। এই সাপকে আমরা কোনোভাবেই আর আনতে চাই না। সেই সাপ না, আর যারা সাপ হতে চায়, তাদেরও না। আমরা সাপুড়ের ভূমিকা পালন করব। বাংলাদেশের জনগণ জানে, আন্দোলন কীভাবে করতে হয়, বিপ্লব কীভাবে করতে হয়। আমরা সেই বিপ্লবের সৈনিক। একটি সাপকে ফেলে দেওয়ার জন্য ২ হাজারের বেশি তাজা প্রাণ ঝরে গেছে। সেই সাপ পালিয়ে গেছে তার ঠিক খোপে।’

গণপরিষদ নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে সাবেক এই বিচারপতি বলেন, গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে তারা একটা সংবিধান তৈরি করবে। তখন একটি আইনগত ভিত্তি পেয়ে যাবেন। এই নির্বাচন কমিশন গণপরিষদ নির্বাচন করবে। পরে তারা জনগণের মতামত নিয়ে একটি সংবিধান তৈরি করবে। যেদিন সংবিধান গৃহীত হবে, সেদিন গণপরিষদ একটা পার্লামেন্টে পরিণত হবে। নতুন করে নির্বাচন করতে হবে না। তাহলে প্রোক্লেমেশনের মাধ্যমে আইনগত ভিত্তিটা পাব। এরপর গণপরিষদ নির্বাচন করব। গণপরিষদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সংবিধান পাব। সংবিধানের মাধ্যমে একটি সংসদ পাব। সেই সংসদের মাধ্যমে সরকার গঠিত হবে। আর বর্তমান সরকার তখন বিদায় নেবে। কিন্তু আপনারা যে পথে হাঁটছেন, তা অত্যন্ত বিপজ্জনক। সুতরাং এখনো সময় আছে, ভূতাপূর্বভাবে প্রোক্লেমেশনটি করেন, কোনো অসুবিধা নেই।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, বর্তমান সংবিধানে একজন ব্যক্তিকে জাতির পিতা ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা নতুন সংবিধানে ফাউন্ডিং ফাদার্স করতে চাই। আমরা এক ব্যক্তি থেকে সবার মাঝে ইতিহাস ভাগ করতে চাই। আমরা চাই সরকার আমাদের ডিক্লারেশনকে প্রকাশ করবে। যদিও আমরা কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখছি না। খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা—এসব সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে থাকতে হবে। নতুন সংবিধানের জন্য গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে; যারা সংবিধান রচনা করবে এবং আইনসভার দায়িত্ব নেবে। রাজনৈতিক দলগুলোর এই গণপরিষদ নির্বাচন নিয়ে কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। কারণ, দুটি নির্বাচন একই সঙ্গে হতে পারে।

৪ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর

‘সাংবিধানিক’ প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি দিয়ে দুদকের ‘পরিসর’ বাড়ানোর সুপারিশ

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত মতিউর ও তাঁর স্ত্রী লায়লা গ্রেপ্তার

কুকুর পরিচালনা শিখতে ইতালি যাচ্ছেন পাঁচজন

সেকশন