ধর্ষণ প্রমাণে এখনো চলছে টু ফিঙ্গার টেস্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১: ০০
সেমিনারে উপস্থিত অতিথিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

২০১৮ সালে ধর্ষণ প্রমাণের ক্ষেত্রে টু ফিঙ্গার টেস্ট (টিএফটি) নিষিদ্ধ করে রায় দেন উচ্চ আদালত। এরপর পেরিয়ে গেছে ৬ বছর। কিন্তু এখনো ধর্ষণ মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়ায় ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ ব্যবহৃত হচ্ছে।

স্বাস্থ্যসেবা, আইন ও এনজিও (বেসরকারি এনজিও সংস্থা) খাতে যারা কাজ করছেন তাদের অনেকেই টিএফটি নিষিদ্ধ হওয়া সম্পর্কে সঠিকভাবে জানেন না। অনেকে বিষয়টি জানলেও এবং ‘প্রটোকল অব হেলথ কেয়ার প্রভাইডার্স’ এর ওপর প্রশিক্ষণ নিলেও কর্মক্ষেত্রে তা অনুসরণ করেন না।

‘ইমপ্লিমেন্টেশন অব দ্য ব্যান অন দি ইউজ অব টু ফিঙ্গার টেস্ট ইন কালেক্টং মেডিকো- লিগ্যাল এভিড্যান্স অব রেপ’ শীর্ষক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।

আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘ইউনাইট টু অ্যান্ড জেন্ডার বেইজড ভায়োলেন্স’ শীর্ষক সেমিনারে এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

আইসিডিডিআরবি (আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ) এই গবেষণা পরিচালনা করে।

গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আইসিডিডিআরবির ম্যাটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড হেলথ ডিভিশনের জেন্ডার ইকুয়ালিটি স্পেশালিস্ট নাহিদা আক্তার। তিনি জানান, গবেষণার জন্য ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের তিন জেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

জেলা তিনটি হলো- ঢাকা, রংপুর এবং দিনাজপুর। এই তিন জেলার স্বাস্থ্য, আইন ও এনজিও খাতে কর্মরত মোট ৪২ জনের সঙ্গে কথা বলা হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় যারা কাজ করছেন তাদের প্রায় সবাই টিএফটি নিষিদ্ধ সম্পর্কে জানলেও প্রত্যন্ত এলাকাগুলোয় এ সম্পর্কে ধারণা নেই। ঢাকায় স্থাস্থ্য খাতে কাজ করছেন এমন ৮ জনের মধ্যে ৭ জনই টিএফটি নিষিদ্ধ সম্পর্কে জানেন।

অন্যদিকে রংপুরে ৯ জনের মধ্যে ৮ জনই এ সম্পর্কে জানেন না। আর দিনাজপুরে ৭ জনের মধ্যে একজনও এ সম্পর্কে জানেন না। একই ভাবে ঢাকায় আইন খাতে যারা কাজ করছেন তারা এ সম্পর্কে জানলেও রংপুর এবং দিনাজপুরের কেউই টিএফটি নিষিদ্ধ সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন। ফলে এ সব জায়গায় ধর্ষণের শিকার কেউ হাসপাতালে গেলে তার টিএফটি করা হচ্ছে।

সেমিনারে বক্তারা জানান, টিএফটি অবৈজ্ঞানিক এবং নারীর মর্যাদা ও গোপনীয়তার পরিপন্থী। এই টেস্টে ভুক্তভোগীর যোনিপথে আঙুল প্রবেশ করিয়ে যৌন সহবাসের অতীত অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করা হয়। কিন্তু এটি ধর্ষণের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দিতে পারে না। বরং এটি ভুক্তভোগীকে মানসিকভাবে আতংকগ্রস্ত করে ফেলে। অনেকে এর ফলে আত্মহত্যাও করে থাকেন।

টু ফিঙ্গার টেস্টের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে ৬টি মানবাধিকার সংস্থা এবং দুজন চিকিৎসক রিট আবেদন করেন। শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ১২ এপ্রিল হাইকোর্ট টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ করার রায় দেন।

সিএসও ফোরামের কো কনভেনর ব্যারিস্টার সারা হোসেনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক। তিনি বলেন, ধর্ষণের সংজ্ঞায় সম্মতি না দেওয়ার বিষয়টি থাকতে হবে। নারীকে মানুষ হিসেবে চিনতে হবে, জানতে হবে এবং সম্মান করতে হবে।

সারা হোসেন বলেন, আমি রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় দেখেছি স্বাস্থ্যসেবা প্রটোকল অনুসরণ করা হচ্ছে। তাহলে অন্যান্য জেলায় কেন এটা চলছে, তা দেখতে হবে। ধর্ষণের পরীক্ষা থেকে যে ট্রমা (আতংক) হয়, সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।

সেমিনারে আরও অংশ নেন কানাডা হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি এডওয়ার্ড ক্যাব্রেরা, আইসিডিডিআরবির এমেরিটাস সায়েন্টিস্ট রুচিরা তাবসসুম নাভেদ প্রমুখ।

বক্তারা ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ পুরোপুরি বন্ধে প্রশাসনকে আরও কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানান।

৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়াদের পুনর্বিবেচনার আবেদন করার সুযোগ

৭ নম্বর ভবনের ৪টি ফ্লোর কাজের উপযোগী করে তোলা হচ্ছে

চিন্ময় দাস শিগগির জামিন পাবেন: ইন্ডিয়া টুডেকে আইনজীবী

তদবির বন্ধে সচিবদের উদ্দেশে তথ্য উপদেষ্টার আধা সরকারি পত্র