এক মাস আগে বাড়িতে পোষা বিড়ালের আঁচড়ে জলাতঙ্কের শিকার হয় সাদিয়া (৭)। তবে দ্রুত হাসপাতালে এনে টিকা দেওয়ায় বেঁচে যায় সে। গতকাল সোমবার ছিল তার শেষ ডোজের টিকা। শুধু সাদিয়া নয়, বছরে ৪ লাখের বেশি মানুষ কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বানরের কামড় বা আঁচড়ের শিকার হয়। আর জলাতঙ্কে মৃত্যুহার বিবেচনায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে তৃতীয়।
আজ মঙ্গলবার বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। তার আগে গতকাল রাজধানীর জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কেন্দ্র সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, কুকুরের কামড়, বিড়ালের আঁচড় খাওয়া রোগীদের ভিড় হাসপাতালে। জরুরি বিভাগের পাশেই জলাতঙ্কের টিকা নিতে আসা মানুষের দীর্ঘ সারি। অনেকে প্রাণীর আক্রমণের শিকার হয়ে, আবার বিভিন্ন পরীক্ষাগারে কর্মরত অনেকে আগাম সতর্কতা হিসেবে টিকা নিতে এসেছে।
জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত ডা. নাঈম হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগের তুলনায় রোগী কমলেও এখনো দিনে ১ হাজারের বেশি লোক টিকা নিতে আসে। এর মধ্যে নতুন রোগী আসে ৩৫০ থেকে ৪০০।
হাসপাতালের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১১ সাল থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত এই হাসপাতালে ৬ লাখ ২১ হাজার ৬৪৭ ব্যক্তি জলাতঙ্কের চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরের মে পর্যন্ত সেবা নিয়েছে ২৬ হাজারের বেশি।
অন্যদিকে, গত ১০ বছরে এই হাসপাতালে জলাতঙ্কে মৃত্যু কমেছে ৮১ শতাংশ। ২০০৯ সালে সর্বোচ্চ ১০৯ জনের মৃত্যু হয়। গত বছর মৃত্যু হয় ২০ জনের। তবে চলতি বছর এ সংখ্যা বেড়েছে। গত আট মাসে মারা গেছে ২৭ জন।
অসচেতনতা, দারিদ্র্য, রাস্তায় কুকুরের সংখ্যাধিক্য এবং পোষা কুকুরের টিকা নিশ্চিতকরণে অবহেলার কারণে এই রোগ এখনো বাংলাদেশে রয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষতি, উচ্চমাত্রার স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মৃত্যুহার বিবেচনায় জলাতঙ্কে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। বছরে ৪ লাখের বেশি মানুষ কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বানরের কামড় বা আঁচড়ের শিকার হয়, যাদের সিংহভাগই ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, ২০১০ সালের আগে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় আড়াই হাজার ব্যক্তি জলাতঙ্ক রোগে প্রাণ হারাত। গবাদিপশুর মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান এখনো অজানা। আনুমানিক সংখ্যা ২৫ হাজার, যার অর্থনৈতিক মূল্য অপরিসীম।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জুনোটিক ডিজিজ কন্ট্রোল অপারেশন প্ল্যানের অধীনে ২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জলাতঙ্কমুক্ত করার লক্ষ্য নেওয়া হয়। এ জন্য ২০২০ সাল থেকে স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কর্মসূচির বাস্তবায়ন চলছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এই কর্মসূচির আওতায় সারা দেশে এক রাউন্ড কুকুরের টিকা প্রদানের কাজ শেষ হয়েছে। দেশের ছয় জেলার তিন রাউন্ড এবং ১৬টি জেলায় দুই রাউন্ড টিকার কাজ শেষ হয়েছে। এভাবে টিকা পাওয়া মোট কুকুরের সংখ্যা ২১ লাখ ৩৮ হাজারেরও বেশি। এ ছাড়া জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কেন্দ্র রয়েছে ৬৭টি। এসব কেন্দ্রে প্রতিবছর বিনা মূল্যে ৪ লাখের বেশি রোগীকে টিকা দেওয়া হচ্ছে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, ব্যাপক হারে টিকাদান নিশ্চিত করলে মানুষ ও কুকুর উভয়েই নিরাপদ থাকবে। তবে প্রাথমিক লক্ষণ দেখে কুকুরের জলাতঙ্ক সংক্রমিত হয়েছে কি না, বোঝা অনেক কঠিন। এ জন্য সচেতনতার বিকল্প নেই।
সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, জলাতঙ্ক রোগ প্রতিরোধের সর্বোৎকৃষ্ট সমাধান কুকুরকে নিয়মিত জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকাদান। জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণে ৭০ ভাগ কুকুরকে টিকার আওতায় আনা গেলে সব কুকুরের শরীরে সম্মিলিত প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। ফলে জলাতঙ্ক ভাইরাস কুকুর থেকে কুকুরে কিংবা মানুষে সংক্রমিত হতে পারে না।
আরও পড়ুন: