নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের চার বছরের বেশি সময় পরও শেষ হয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের কর্মচারী নিয়োগ কার্যক্রম। একাধিক ধাপে বেশ কিছুসংখ্যক পদের নিয়োগ চূড়ান্ত হলেও এখনো ৬১০টি পদের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হয়নি। কবে নাগাদ এসব পদের নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হবে, তা স্পষ্ট করে বলতে পারছে না মাউশি।
মাউশির এ নিয়োগপ্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীরা পরীক্ষার ফল দ্রুত প্রকাশের দাবিতে মানববন্ধনও করেছেন। প্রদর্শক পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া আতিকুর রহমান বলেন, ‘চার বছরেও নিয়োগ শেষ করতে পারেনি মাউশি। এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে? ইতিমধ্যে অনেকের চাকরির বয়সও শেষ হয়ে গেছে। সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে ফল প্রকাশের দাবি জানাই, না হলে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।’
একই সুরে কথা বলেন কিছুদিন আগে মাউশিতে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী আব্দুল মালেক। তিনি বলেন, ‘এ চাকরির আশায় কয়েকটি চাকরিতে সুযোগ পেয়েও যোগ দেইনি। অথচ মাউশি কর্তৃপক্ষ আমাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।’
২০২০ সালের ২২ অক্টোবর দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির ৪ হাজার ৩২টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় মাউশি। এরপর ধাপে ধাপে নিচের দিকের পদগুলোতে চূড়ান্ত নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে দশম গ্রেডের প্রদর্শক, গবেষণা সহকারী, সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার, ল্যাবরেটরি সহকারী পদের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়নি। এ চার পদে শূন্য পদসংখ্যা ৬১০টি। এর মধ্যে প্রদর্শক ৫১৪, গবেষণা সহকারী ২১, সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার ৬৯ ও ল্যাবরেটরি সহকারী ৬টি পদ রয়েছে।
মাউশি থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের আগস্টে প্রদর্শক ও গবেষণা সহকারী পদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এর আড়াই বছর পর গত ২৪ এপ্রিল এ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ৪ মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত হয় মৌখিক পরীক্ষা। কাছাকাছি সময়ে সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার ও ল্যাবরেটরি সহকারী পদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও ফল প্রকাশ করা হয়নি। এ চার পদে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ৭ হাজার ৯৬৩ প্রার্থী।
মাউশির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তার দাবি, এসব পদে নিয়োগজট খোলার ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। কারণ মাউশির একটি অংশ চায় নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে। এ জন্যই ফল প্রকাশে টালবাহানা করা হচ্ছে। মাউশির নিয়মিত মহাপরিচালক ও পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) না থাকাও ফল আটকে থাকার অন্যতম কারণ।
থমকে থাকা নিয়োগ কার্যক্রম সম্পর্কে আজকের পত্রিকা থেকে জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. এ কিউ এম শফিউল আজম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মাউশি সূত্র বলছে, ক্ষমতার পট-পরিবর্তনের পর এসব পদে নিয়োগে কোটা প্রয়োগের বিষয়টি সামনে এনে কালক্ষেপণ শুরু করে একটি পক্ষ। যদিও গত ১৩ নভেম্বর নিয়োগে কোটা প্রয়োগের বিষয়টি স্পষ্ট করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (বিধি অনুবিভাগ) উদয়ন দেওয়ান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘২২ অক্টোবর, ২০২০ তারিখে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির শর্তাধীনে অর্থাৎ সবশেষ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির আলোকে নিয়োগ সম্পন্ন করাই সমীচীন হবে।’