নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, ‘বিদেশি অর্থায়ন থাকুক বা না থাকুক, জনগণের সুরক্ষা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।’ এ কারণেই জাতীয় বাজেট থেকে অর্থ বরাদ্দ করে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে ‘ক্যাটালাইজিং ক্লাইমেট অ্যাডাপ্টেশন অ্যাকশন অ্যাট স্কেল অ্যান্ড মোবিলাইজিং ইনভেস্টমেন্ট’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের আয়োজিত এই কর্মশালায় নীতিনির্ধারক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সহযোগীরা জলবায়ু অভিযোজন বিনিয়োগের জরুরি প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অভিযোজনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরলেও এর সীমাবদ্ধতার কথাও উল্লেখ করেন। আইপিসিসি’র তথ্যের বরাত দিয়ে তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘যদি জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করা না যায়, তবে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানির নিচে চলে যেতে পারে। অভিযোজন জরুরি, তবে এর মানে এই নয় যে, আমরা পরিবেশ বিধ্বংসী অর্থনৈতিক মডেল চালিয়ে যাবো।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অভিযোজন চাহিদা বিজ্ঞানসম্মতভাবে নিরূপণ করা হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক তহবিলের ধীর প্রবাহ ও অনুদানের পরিবর্তে ঋণ দেওয়ার প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘সিওপি-২৯–এ আর্থিক প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে, কিন্তু যদি তা দেরিতে আসে বা ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়, তবে তা আমাদের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ আরও বাড়াবে।’
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘অর্থ ও প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ, তবে প্রকৃত সমাধান হতে হবে স্থানীয় ও জনগণের অংশগ্রহণমূলক। জলবায়ুর প্রভাব সবচেয়ে বেশি যাঁরা অনুভব করছেন, তাঁরা এসব আলোচনার সঙ্গে যুক্ত নন। বিনিয়োগকারীদের মাঠপর্যায়ের বাস্তবতার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা জরুরি।’
তিনি আরও বলেন, ‘উন্নয়ন ভাবনায় পরিবর্তন আনতে হবে। শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয়, টেকসই ও সহনশীলতাও বিবেচনায় রাখতে হবে। ঢাকা থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্ত বিশ্বকে বুঝতে হবে—মানুষ প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, বরং তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে চলতে হবে।’
খুলনা ও যশোরের জলাবদ্ধতা সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পুরনো প্রকৌশলগত নকশার ভুলে কৃষকরা ভোগান্তিতে আছেন।’ ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল এড়াতে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের কৃষকরা কখনো ধর্মঘটে যায়নি, তারা সবসময় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। তাই তাদের স্থানীয় সমাধানগুলো আধুনিক প্রযুক্তির সাথে সংযোগ ঘটালে আরও ভালো ফল পাওয়া যাবে।’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের আর পরিকল্পনার প্রয়োজন নেই, এখন বাস্তব পদক্ষেপ দরকার।’ তিনি সরকার, বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সহযোগীদের দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান এবং বলেন, ‘সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষকে সহায়তা করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন—ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক গোয়েন লুইস, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়াং, এসিআই অ্যাগ্রোবিজনেসের প্রেসিডেন্ট ড. এফএইচ আনসারি, ইউনিভার্সিটি অব ডান্ডির ইউনেস্কো ওয়াটার ল’ সেন্টারের জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. নন্দন মুখার্জি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সিনিয়র সাসটেইনেবিলিটি অ্যাডভাইজার ড. জন মার্টন, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের করপোরেট ক্লায়েন্ট কভারেজ প্রধান এনামুল হক, ব্র্যাকের মাইক্রোফাইন্যান্স বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর অরিঞ্জয় ধর।