নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ভাবনায় শুধু ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন সামনে রেখেই চলছে ইসির কাজ। তবে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নির্ভর করছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনও গতকাল মঙ্গলবার এমন কথাই বলেছেন।
সূত্র বলেছে, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ইসি ভোটার তালিকা হালনাগাদে জোর দিচ্ছে। জানুয়ারি থেকে এ জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করার কথা ভাবছে। সীমানা পুনর্নির্ধারণ ও নতুন দলের নিবন্ধনের কাজে ইসি ধীরগতিতে এগোচ্ছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সব কাজ স্থগিত রয়েছে। সিইসি ইতিমধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ৩ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সংস্কার কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দেওয়ার কথা।
সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন গতকাল কুমিল্লায় আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয়, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করছে জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত এই মতবিনিময় সভায় সিইসি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তাঁর বক্তব্যে জাতীয় নির্বাচনের কথা বলেছেন।
তাঁর বক্তব্যের আলোকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে তাঁরা কাজ করছেন। এখন কমিশনের কাজ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা।
সূত্র জানায়, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব পাওয়ার পর সেই আলোকে সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজে হাত দিতে চাইছে ইসি। কারণ, ইসি এখন এই কাজ শুরু করলে পরে যদি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সঙ্গে তা না মেলে, তাহলে বিষয়টি সাংঘর্ষিক হবে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন সীমানা পুনর্নির্ধারণ, রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, জাতীয় এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন প্রস্তুতি, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত ও তদারকি এবং উপকারভোগী পর্যায়ে আলোচনাবিষয়ক কমিটি কয়েকটি বৈঠক করেছে। এই কমিটি প্রাথমিক কাজ এগিয়ে রাখছে।
জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, সীমানা পুনর্নির্ধারণ ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের বিষয়ে কমিশন এখনো কোনো নির্দেশনা দেয়নি। কমিশন নির্দেশনা দিলে সে অনুযায়ী কাজ হবে।
সূত্র জানায়, বিভিন্ন জেলা থেকে সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য ইসিতে ইতিমধ্যে শতাধিক আবেদন এসেছে। আবেদনকারীদের বেশির ভাগ ২০০১ সালের মতো অবস্থানে সংসদীয় আসন ফিরিয়ে আনার দাবি করেছেন। কারণ, ২০০৮ সালে ১৫০টির মতো আসনে কাটাছেঁড়া করেছে তৎকালীন সিইসি এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। সে সময় অনেক আসন বিলুপ্ত করা হয় এবং আওয়ামী লীগকে সুবিধা দিতে তৈরি করা হয় নতুন আসন।
সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, অতীতে সীমানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম, কোনো প্রার্থীকে জেতানোর জন্য বা কাউকে হারানোর জন্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোনো সীমানা পুনর্নির্ধারণ হয়ে থাকলে অবশ্যই দেখা হবে। সীমানা পুনর্নির্ধারণ ২০০১ সালের নাকি বর্তমানের ভিত্তিতে হবে, বিষয়টি তা নয়, এটি হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে।
সূত্র বলেছে, বিগত সময়ে কোনো রাজনৈতিক দলকে অন্যায়ভাবে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে কি না, তা নিয়ে কমিশনে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদন আহ্বান বাধ্যতামূলক কি না, সে নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
বিগত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর অংশগ্রহণের পথ সহজ করতে ভোটারের স্বাক্ষর নেওয়ার বিষয়টি বাদ দেওয়াসহ বেশ কিছু পরিবর্তন আনে গত ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করা কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অন্যান্য দলের প্রার্থী না পাওয়ার আশঙ্কায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ওই পরিবর্তন করিয়েছিল।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন এমন কাজে হাত দিচ্ছে না। অবশ্য ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহল স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগের মতো নির্দলীয় প্রতীকে করার দাবি জানিয়েছে। তবে কমিশন জাতীয় নির্বাচনকে প্রাধান্য দেওয়ায় এ নিয়ে এখনই ভাবছে না। জাতীয় নির্বাচনের ভাবনা অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা সাজানোর চেষ্টা করছে কমিশন। সম্প্রতি সিইসি বলেছেন, তাঁরা প্রথম দিন থেকেই জাতীয় নির্বাচনের জন্য কাজ শুরু করেছেন। জাতীয় নির্বাচনের জন্য যেসব প্রস্তুতির দরকার, তার সবই তাঁদের রয়েছে।
সূত্র জানায়, কাল বৃহস্পতিবার চলতি বছরের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে। দাবি, আপত্তি শেষে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী ২ মার্চ। আইনি কোনো বাধা না থাকায় ও আগামী বছরের জন্য চলতি মাসে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম আগাম শুরু করতে পারে ইসি। বিষয়টি কমিশনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যাঁদের বয়স ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি ১৮ বছর পূর্ণ হবে, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। পাশাপাশি যাঁরা মারা গেছেন, ভোটার তালিকা থেকে তাঁদের নাম বাদ দেওয়া হবে।
ভোটার তালিকা হালনাগাদেও জোর দিয়েছে ইসি। সিইসি গতকাল কুমিল্লায় বলেন, ‘এখন আমাদের কাজ ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। ভোটার তালিকা থেকে মৃত ও রোহিঙ্গাদের বাদ দিতে কাজ করছি। তরুণদের ভোটার তালিকায় অংশ নিতে উৎসাহিত করছি।’