২০০১ সাল থেকে চলতি বছর (২০২৩) পর্যন্ত দেশের ৩৩ জেলায় নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম। তবে এই চলতি বছরে মোট ৯ জন ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছেন। যার মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন।
চলতি বছরে ৫ জন মারা যাওয়ার পর এরই মধ্যে সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেশের প্রতিটি হাসপাতালে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের সেবা দেওয়ার সময় চিকিৎসকদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
গত ৩০ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. শেখ দাউদ আদনান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘দেশে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় মহাখালীর ডিএনসিসি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে ১০ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড এবং ১০ বেডের আইসিইউ প্রস্তুত রাখার জন্য অনুরোধ করা হলো।’
অধিদপ্তরের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ভয়ংকর নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে মহাখালীর ‘ডিএনসিসি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল’ এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম শফিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০টি শয্যা প্রস্তুতের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ শয্যার আইসিইউ ও ১০ শয্যার আইসোলেশন প্রস্তুত রাখা হয়েছ।’
মূলত নিপাহ একটি ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। এ রোগে মৃত্যুর হার ৭৫ শতাংশ। ১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ায় এই রোগের প্রথম প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়। বাংলাদেশে ২০০১ সালে প্রথম এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় মেহেরপুর জেলায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নিপাহ আক্রান্ত সব রোগীর লক্ষণ এক রকম নাও হতে পারে। আবার কারও কারও কোনো লক্ষণ প্রকাশ নাও পেতে পারে। সাধারণত বাদুড় মুখ দিয়েছে এমন খেজুর রস পান করা বা আধা খাওয়া ফল থেকে এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির বা পশুর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসার দুই সপ্তাহের মধ্যে মৃদু থেকে তীব্র শ্বাসকষ্ট, জ্বরসহ মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে ব্যথা, খিঁচুনি, জ্ঞান হারানোর মতো লক্ষণ দেখা দিলে নিপাহ বলে ধরে নেওয়া হয়।
নির্দেশনায় চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে-
১. রোগী দেখার সময় আবশ্যিকভাবে মাস্ক পরতে হবে। রোগী দেখার আগে ও পরে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
২. জ্বরের উপসর্গ থাকলে রোগীকে অবশ্যই আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখতে হবে।
৩. জ্বরে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে অজ্ঞান অবস্থা দেখা দিলে তাকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখতে হবে।
৪. আইসিইউতে থাকাকালে রোগীর পরিচর্যাকারীরা শুধু গ্লাভস ও মাস্ক পরলেই হবে। কারণ, রোগী থেকে বাতাসের মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়ায় না।
৫. যেহেতু আইসিইউতে রেখে এই রোগীর চিকিৎসা করা যায়, এ জন্য অন্য কোথাও পাঠানোর প্রয়োজন নেই।
৬. যেকোনো প্রকার তথ্যের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কল সেন্টারে ১৬২৬৩-৩৩৩ এবং ১০৬৫৫ নম্বরে যোগাযোগ করবেন।
আরও পড়ুন: