কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
সীমান্তে উত্তেজনা বাড়ানোর মতো উসকানিমূলক পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জন্য ভারতকে পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকায় দেশটির হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে গতকাল রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে এ পরামর্শ দেওয়া হয়। আজ রোববার সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
হাইকমিশনারকে মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তলব করা হয়। তাঁদের মধ্যে প্রায় ৪৫ মিনিট কথা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সীমান্তে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সাম্প্রতিক কার্যকলাপ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের গভীর উদ্বেগের কথা হাইকমিশনারকে জানান পররাষ্ট্রসচিব।
সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে এমন কোনো উসকানিমূলক পদক্ষেপ থেকে ভারতের সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে বিরত রাখার জন্যও দেশটির সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এই ধরনের কার্যকলাপ, বিশেষ করে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের অননুমোদিত প্রচেষ্টা, বিএসএফের সংশ্লিষ্ট অপারেশনাল পদক্ষেপ সীমান্তে উত্তেজনা ও ঝামেলা সৃষ্টি করেছে। যথাযথ অনুমোদন ছাড়াই কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সহযোগিতা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের চেতনাকে ক্ষুণ্ন করে।
আসন্ন বিজিবি-বিএসএফ ডিজি পর্যায়ের আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব হবে বলে জসীম উদ্দিন আশাপ্রকাশ করেন।
সুনামগঞ্জে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যুর কথা তুলে ধরেন পররাষ্ট্রসচিব। সীমান্তে হত্যার পুনরাবৃত্তি নিয়ে গভীর উদ্বেগ এবং হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধ, সকল সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বারবার হত্যা বন্ধ করার এবং অ-প্রাণঘাতী কৌশল অনুসরণের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও এই ধরনের হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে— এটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়।’
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, এই সমস্যাগুলো গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে, বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুসারে এবং সীমান্তে শান্তি ও স্থায়িত্ব বজায় রাখার উপায়ে সমাধান করা উচিত।
সাক্ষাতের পর মন্ত্রণালয় ত্যাগের সময় হাইকমিশনার ভার্মা সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্ত অপরাধহীন রাখতে উভয় পক্ষ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যাতে করে চোরাচালান ও অপরাধীদের চলাচল রোধ করা সম্ভব হয়।
প্রণয় ভার্মা বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা (স্মারক) আছে। সীমান্ত রক্ষা বাহিনীগুলো নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। আশা করি যে সমঝোতা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হবে।’
সীমান্ত অপরাধহীন রাখার জন্য দুই দেশ সহযোগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন হাইকমিশনার।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুই দেশের মধ্যে ৪ হাজার ১৫৬ কিলোমিটার স্থলসীমান্তের মধ্যে ভারত ৩ হাজার ২৭১ কিলোমিটার দীর্ঘ স্থানে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে। ৮৭৫ কিলোমিটার বেড়া দেওয়া বাকি আছে।