অপরাধীদের জন্য আর নিরাপদ আশ্রয়স্থল থাকছে না যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যে উভয় দেশের অপরাধীরা যাতে নিরাপদে থাকতে না পারে সে জন্য বিষয়টি একটি আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এ লক্ষ্যে বহিঃসমর্পণ বা প্রত্যর্পণ এবং পারস্পরিক আইনি সহযোগিতা (এমএলএ) বিষয়ে একমত হয়েছে ঢাকা ও লন্ডন।
সম্প্রতি লন্ডনে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। আর যুক্তরাজ্যের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব ফিলিপ বার্টন। সেখানে অপরাধীদের জবাবদিহির আওতায় নিয়ে আসতে এমএলএ এবং বহিঃসমর্পণ নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় দুই দেশই এ বিষয়গুলোতে একমত হয়। এ নিয়ে সম্পর্ক আরও গভীর করার কথা জানায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, কিছু অপরাধী রয়েছেন যুক্তরাজ্যে অপরাধ করে বাংলাদেশে চলে আসেন। আবার কিছু অপরাধী রয়েছেন যারা বাংলাদেশ থেকে অপরাধ করে যুক্তরাজ্য গিয়ে বসবাস করছেন। দুই দেশেই অপরাধীদের যাতে শাস্তি ও বিচারের আওতায় আনা যায় এ বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে।
বৈঠকের পর দুই দেশের প্রকাশিত যৌথ কমিউনিকের (ইশতেহার) ৪র্থ অংশের শেষে বলা হয়েছে, দুই দেশই আইনি সহযোগিতা এবং বহিঃসমর্পণ নিয়ে সহযোগিতা আরও গভীর করতে একমত হয়েছে।
বাংলাদেশের আদালতে সাজা পাওয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান, সম্প্রতি অবৈধ অস্ত্র ও জাল টাকা রাখার মামলায় সাজা হওয়া সেনাবাহিনীর সাবেক কর্নেল শহীদ উদ্দিন খানসহ বেশ কয়েক জন এ মুহূর্তে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশে তাঁদের পলাতক দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত পলাতক আসামি চৌধুরী মঈনুদ্দীন যুক্তরাজ্য অবস্থান করছেন বলে ধারণা করছে বাংলাদেশ। পলাতক থাকায় তাঁর দণ্ড কার্যকর করা যায়নি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কিছু নাগরিক রয়েছেন, যারা সেখানে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। বন্দী বিনিময় ও এমএলএ আইনি কাঠামোতে চলে এলে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীসহ অপপ্রচারকারীদের ফেরত এনে বিচারের মুখোমুখি করা যাবে। আর এটি বাস্তবায়ন করবে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা এ রকমও উদাহরণ পেয়েছি যে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশের মসজিদ-মাদ্রাসায় অর্থ দিয়ে থাকেন। দেখা গেছে, সেই অর্থ জঙ্গিবাদের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এমন-হয় যে ব্যক্তি অর্থ দিয়েছেন, তা মহৎ উদ্দেশ্যে দিয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে এ ধরনের অর্থ উদ্দেশ্যমূলক ভাবে দেওয়া হয়ে থাকে। ফলে দুই দেশই অনুধাবন করেছে যে দ্বিপক্ষীয় এ সহযোগিতাটি আরও গভীর করা উচিত। অপরাধীরা যাতে অন্য দেশে গিয়ে ‘সেফ হ্যাভেন’ না পায় তা নিশ্চিত করাই লক্ষ্য। এমএলএর আওতায় এ নিয়ে আলোচনার বিষয়টি যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে।