ভাষা আন্দোলনে অবদান না থাকলে পাকিস্তান সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জেলে বন্দী করেছিল কেন? এমন প্রশ্ন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘ভাষা আন্দোলনে তাঁর (বঙ্গবন্ধু) যে অবদান, সেই অবদানটুকু কিন্তু মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। অনেক বিজ্ঞজন, আমি নাম বলতে চাই না, চিনি তো সবাইকে, অনেকে বলেছে—ওনার (বঙ্গবন্ধু) আবার কী অবদান ছিল। উনি তো জেলেই ছিলেন।’
আজ সোমবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘একুশে পদক-২০২৩’ প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জেলে ছিলেন বলে ওনার কোনো অবদান নেই? তো উনি জেলে ছিলেন কেন? এই ভাষা আন্দোলন করতে যেয়েই তো তিনি কারাগারে (বন্দী হয়েছেন)।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৮ সালে মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সূচনা বঙ্গবন্ধুই করেছিলেন। তাঁর (বঙ্গবন্ধু) উদ্যোগে ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয় বলেও জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের পথ ধরে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন।’
পাকিস্তানের গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে বান্ধবী প্রয়াত বেবী মওদুদসহ মুক্তিযোদ্ধা, লেখক, সাংবাদিক এম আর আখতার মুকুলের কাছে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তিনি বলেন, ‘ওনারা তো অনেক উঁচু মাপের লোক, আমাদের মতো ছোট চুনোপুঁটিরা কিছু লিখলে তো হবে না। তো মুকুল ভাইকে বললাম, আপনার কাছে এই যে সমস্ত রিপোর্ট দিলাম, কোন তারিখে, কখন কী করেছেন—এখানে সব ডিটেইল আছে। ফাইলটা দিলাম; আপনি এর জবাবটা লিখুন। তিনি সত্যিই লিখেছিলেন।’
বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার একটা প্রবণতা সব সময় ছিল বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
ভাষা-সাহিত্য, সংস্কৃতির বিকাশে আওয়ামী লীগ সরকারের অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা বাঙালি হিসেবেই মাথা উঁচু করে বিশ্বদরবারে চলব। আমরা বাংলাদেশ পেয়েছি; এই বাংলাদেশকে আমরা আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব উন্নয়নের পথে।’
ভাষা আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের মাতৃভাষা দিবস। শুধু আমাদের না, এটা এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশে ফেব্রুয়ারি রক্ত দিয়ে রক্তের অক্ষরে একুশের শহীদরা লিখে দিয়ে গেছেন—মাকে মা বলে ডাকতে চাই।’
এ বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক-২০২৩ দিয়েছে সরকার। গুণীজনদের হাতে একুশে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।