সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যাকাণ্ডে আটক ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে নিজেদের হেফাজতে রেখে জেরা করছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে তিনি এলোমেলো কথা বলছেন এবং খুনের ঘটনায় তাঁর জড়িত থাকার বিষয়টি বারবার অস্বীকার করেছেন।
গোয়েন্দা পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, সাইদুলকে ছেড়ে দিতে তদন্তকারীদের কাছে বিভিন্ন পর্যায় থেকে তদবির আসছে। একই সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে তাঁকে ফাঁসানোর অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠন।
এমপি আজীম খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার সন্দেহে গত মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে সাইদুল করিম মিন্টুকে আটক করে ডিবি।
ডিবি পুলিশের সূত্র বলছে, এমপি খুনের পর মূল ঘাতক আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বৈঠক করেছিলেন সাইদুল। সেখানে তাঁকে মৃত আজীমের ছবি দেখান শিমুল। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এ তথ্য জানান আমানুল্লাহ। সেখান থেকেই এই হত্যার সঙ্গে মিন্টুর সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে সন্দেহ করে ডিবি। ডিবির হাতে আসা সেই ছবিতে দেখা যায়, এমপি আজীমকে খালি শরীরে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। মুখের ভেতর সাদা কাপড় দিয়ে বাঁধা।
রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে গতকাল বুধবার ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আটক মিন্টু জিজ্ঞাসাবাদে সদুত্তর দিতে না পারলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে সদুত্তর দিতে পারলে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সাইদুলকে ছাড়াতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে তদবির আসছে। কিন্তু তদন্তকালে পুলিশ কোনো তদবির শুনবে না।
এদিকে সাইদুলকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে অভিযোগ করে তাঁকে পুলিশি হেফাজত থেকে ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন। গতকাল শহরের পায়রা চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে জেলা আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতারাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করা হয়।
অন্যদিকে এমপি আজীমের মেয়ে ডরিন গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। পরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘তার বাবা হত হয়েছে, সে তার বাবার হত্যার বিচার চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। কেউ যেন ছাড় না পায়, সেটিই বলতে এসেছিল সে।’
টানা তিনবারের এমপি ও ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল আজীম ১২ মে চিকিৎসার জন্য কলকাতায় যান। পরে তিনি নিখোঁজ হন। একপর্যায়ে খবর পাওয়া যায়, চোরাচালানের ২০০ কোটি টাকার সোনা নিয়ে দ্বন্দ্বে তিনি খুন হয়েছেন।