শিল্প এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, ‘কারাগারগুলোকে সংস্কার করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্যোগী হতে হবে। এ–সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী করতে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সুপারিশ করবে। যারা বন্দীদের অধিকার নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের অনুরোধ করব সুযোগটি কাজে লাগানোর জন্য। গত ১৫ বছর এসব নিয়ে কথা বলা যায়নি। এখন সুযোগ হয়েছে। এখন গুম-খুন, ভয়ের সংস্কৃতি নেই।’
আজ শনিবার কারা অধিদপ্তরে ‘কারাগার সংস্কার: বাস্তবতা ও করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আইন, আদালত, মানবাধিকার ও সংবিধান বিষয়ক সাংবাদিকদের শীর্ষ সংগঠন ল রিপোর্টার্স ফোরাম (এলআরএফ) ও কারা অধিদপ্তর যৌথভাবে এ কর্মশালা আয়োজন করে। এতে সহযোগিতা করে ল ল্যাব। কর্মশালায় ‘জেল সংস্কার: সমসাময়িক প্রেক্ষাপট ও প্রস্তাবনা’ বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
এলআরএফের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান জাবেদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মিশন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রশিক্ষণ ও কল্যাণ সম্পাদক জাবেদ আখতার। কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন কারা উপমহাপরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবির, সাবেক কারা উপমহাপরিদর্শক মো. শামসুল হায়দার সিদ্দিকী প্রমুখ। ফোরামের অর্ধশত সদস্য কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘সবাই মিলে আমরা একটি পরিবার। কারাগার-আদালত সর্বোপরি সমাজব্যবস্থা পরিবর্তন করতে একসঙ্গে আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে। আলাদাভাবে সম্ভব না। কারাগারের সংস্কারের জন্য একসঙ্গে চেষ্টা করতে হবে। আদালতগুলোতে যেন নির্যাতিত মানুষের সংখ্যা কমে আসে। বিচারগুলো যেন হয়।’ আইনজীবীদের সঙ্গে বন্দীদের সাক্ষাতে যে সমস্যা তা দ্রুত সমাধান করতে কারা কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘রায়ের সমালোচনা করার অধিকার বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের আছে। একাডেমিক আলোচনা কোনটা, কল্যাণার্থে আলোচনা কোনটা আর আদালত অবমাননা কোনটা—এর পার্থক্য আমাদের বুঝতে হবে। রায়ের সমালোচনা একাডেমিক উদ্দেশ্যে, কল্যাণার্থে এবং সংশোধনের উদ্দেশ্যে সব সময়ই করা যেতে পারে বলে আমি মনে করি।’
বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস আরও বলেন, ‘বিভিন্ন সংস্থাকে সম্পৃক্ত করে কারা সংস্কারে উদ্যোগ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, কারাগার আমাদের সমাজেরই অংশ। কারাবন্দী একজন মানুষের শুধু ফ্রিডম অব মুভমেন্ট থাকবে না। তাঁর ভোটাধিকার বা কথা বলার অধিকার কেন থাকবে না? এটি তাঁর সাংবিধানিক অধিকার। কারাবন্দীদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য যা প্রয়োজন করতে হবে। দণ্ডিত মায়েদের সন্তানদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘কারা আইন সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে। মানবিকভাবে কারাগারগুলোকে গড়ে তুলতে হবে। জেল কোড ও ফৌজদারি কার্যবিধি সংশোধন করে যুগোপযোগী করা এখন সময়ের দাবি। কারাগারে দুর্নীতির সিন্ডিকেট রয়েছে। কারাগারে অবৈধভাবে সেবা কেনার সুযোগ আছে। সেগুলো বন্ধ করতে হবে। কারণ, বন্দীরা সবাই সমান।’
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহার হোসেন বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ১৭টি কারাগারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। পরবর্তীকালে সব কারাগারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দেশের সব কারাগারে এখন নিরাপদ ও স্বাভাবিক পরিবেশ রয়েছে।’
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধে মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘কারাগার মূলত সংশোধনাগার। কারাগারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অপরাধীর সংস্কার বা সংশোধন। জেলগুলো মূলত ১৮৬০ সালের জেল কোড, দ্য প্রিজন্স অ্যাক্ট ও দ্য প্রিজনার্স অ্যাক্ট আইনসমূহের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এসব আইন ঔপনিবেশিক আমলের। এসব আইন সংশোধন করে জেল ব্যবস্থা সংস্কার এখন সময়ের দাবি।
শিশির মনির বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে কনডেম সেলে এবং কারাগারে নির্জন স্থানে রাখা আইনের লঙ্ঘন। চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ল রিপোর্টার্স ফোরামের যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর হোসেন, অর্থ সম্পাদক মনজুর হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম নূর মোহাম্মদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব এবং কার্যনির্বাহী সদস্য শামীমা আক্তার, মুহাম্মদ ইয়াছিন, আরাফাত মুন্না, মোহাম্মদ আবু নাছের ও সাকিল আহমাদ।