ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে গেছে যুক্তরাজ্য। ফলে এখন ইইউতে বাংলাদেশের হয়ে কথা বলতে পারার মতো অংশীদার খুঁজতে হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো জার্মানির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কৌশলগত পর্যায়ে নিয়ে গেছে ঢাকা। এ ছাড়া ইইউ-এর আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে কাজ করছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত আগস্টে প্রথমবারের মতো ঢাকা ও বার্লিন কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে অংশ নিতে জার্মানি গিয়েছিলেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। বৈঠকে দুই দেশের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এতে জলবায়ু পরিবর্তন, ব্লু ইকোনমি, জঙ্গিবাদ মোকাবিলা, সাইবার নিরাপত্তা, মানব ও মাদক পাচার, অবৈধ অনুপ্রবেশ, জার্মানি থেকে নথিবিহীন বাংলাদেশিদের ফেরত আনা, আফগানিস্তান পরিস্থিতি, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল, রোহিঙ্গা ইস্যু, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, কানেকটিভিটি এবং আঞ্চলিক সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি ও বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই), জাপানের প্রস্তাবিত বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ ইনিশিয়েটিভ (বিগ বি), বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল সংযুক্তির (বিবিআইএন) মতো বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ইইউতে আগে বাংলাদেশের অন্যতম শক্তিশালী বন্ধু ছিল যুক্তরাজ্য। ইইউ পার্লামেন্টে বা ইইউয়ে অভ্যন্তরে বাংলাদেশের হয়ে কথা বলত। ব্রেক্সিটের পর নতুন করে ইইউতে শক্ত অবস্থান গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে বাংলাদেশ। তাই এই আঞ্চলিক জোটের শক্তিশালী দেশ হিসেবে শুরুতে জার্মানির সঙ্গে সম্পর্ক কৌশলগত পর্যায়ে উন্নয়ন করেছে ঢাকা। এখন নিয়মিত কৌশলগত সংলাপের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে প্রস্তাব তৈরি করা হচ্ছে। জার্মানির পর ফ্রান্স ও ইতালির সঙ্গেও সম্পর্ক কৌশলগত পর্যায়ে উন্নীত করা নিয়ে কাজ করা হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, রাজনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশ ও জার্মানির সম্পর্ক বেশ জোরালো। দুই দেশের সরকার প্রধানের মধ্যে বেশ ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সেই সম্পর্ক দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে প্রতিফলিত করাও অন্যমত একটি লক্ষ্য।
ইইউভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানো নিয়ে প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগামী ৫০ বছরের বিষয় মাথায় রেখে কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে গতানুগতিক ফরেন অফিস কনসালটেশনের (এফওসি) জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে কৌশলগত সংলাপ বা কম্প্রিহেনসিভ সংলাপ চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
তবে ইইউ-এর এই সম্পর্ক বাড়ানোর প্রচেষ্টার সঙ্গে ব্রেক্সিটের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছে মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, ইইউয়ের যে দেশগুলো রয়েছে তাদের সঙ্গেও সম্পর্ক বাড়ানোর কাজ চলছে। ইতালি ও ফ্রান্স, ইইউয়ে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় সদস্য, তাদের সঙ্গে যদি সম্পর্ক আরও উপড়ে যদি নিতে পারি, তাহলে ইইউয়ের বাকি দেশগুলো এদের অনুসরণ করবে।
বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গে স্বাধীনতার প্রথম দিকে দাতা ও গ্রহীতা ভিত্তিক সম্পর্ক ছিল বাংলাদেশের। পরবর্তীতে এ সম্পর্কে বাণিজ্য অন্যতম প্রভাবক হিসেবে আবির্ভূত, এরপরে যুক্ত হয়েছে বিনিয়োগ। গত ৫০ বছরে সম্পর্ক অনুদান থেকে বাণিজ্য, এরপর বিনিয়োগে গিয়ে পৌঁছেছে। এখন সম্পর্কগুলোকে কৌশলগত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায় বাংলাদেশ। এ জন্য রাশিয়া, জাপানসহ অন্য শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক কৌশলগত পর্যায়ে নিতে কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।