হোম > মতামত

বাংলাদেশে বাইডেনের ডেমোক্রেসি ক্রুসেড বিপথগামী হয়েছে: ব্লুমবার্গ

বাসস, ঢাকা

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ ‘বাংলাদেশে বাইডেনের ডেমোক্রেসি ক্রুসেড বিপথগামী হয়েছে’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। যেখানে অজ্ঞাতনামা কিছু বাংলাদেশির ভিসা বিধিনিষেধ সম্পর্কিত গত মাসের মার্কিন ঘোষণাকে ‘বরং একটি অস্পষ্ট বিবৃতি’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

ব্লুমবার্গে গত ৯ অক্টোবর প্রকাশিত নিবন্ধে বাংলাদেশের ওপর সম্প্রতি আরোপিত মার্কিন ভিসা বিধিনিষেধকে ‘এক ধরনের উন্মুক্ত ধমক’ বলে বর্ণনা করে এই পদক্ষেপকে ‘ন্যায্য বা সংবেদনশীল নয়’ বলে অভিহিত করা হয়।

ব্লুমবার্গ ওপিনিয়ন কলামিস্ট ও নয়াদিল্লির অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো মিহির শর্মা নিবন্ধটি লিখেছেন, যা বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক নীতি ও কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করে বলেছে যে, ‘রাজনৈতিকভাবে, দেশটি তেমন অনুকরণীয় নয়’।

বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কে নিবন্ধে বলা হয়, ‘আপনাকে অভ্যুত্থান সমর্থন করার বা কারচুপির নির্বাচনের প্রশংসা করার দরকার নেই। একই সঙ্গে, আপনার সব সময় খুব ঘরোয়া অভ্যন্তরীণ বিরোধে নিজেকে ঢোকানোরও দরকার নেই।’

নিবন্ধে আরও বলা হয়, মার্কিন বিধিনিষেধ ‘ন্যায্য নয়, কারণ মনে হচ্ছে যে বাংলাদেশকে আলাদা করা হচ্ছে’। এতে আরও বলা হয়, নীতিটি ‘যুক্তিযুক্ত নয় কারণ এতে মার্কিন পক্ষপাতিত্ব দেখা যাচ্ছে’। নিবন্ধে সতর্ক করে বলা হয়, ‘বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করার মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি’।

ব্লুমবার্গের ওই নিবন্ধে যা বলা হয়েছে

অর্থনৈতিকভাবে, বাংলাদেশ গত এক দশক ধরে একটি সাফল্যের নজির। ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইনের মতো দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে এবং গড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশ শিগগিরই দরিদ্র দেশগুলোর সারি থেকে উত্তরণ লাভ করবে। বিভিন্ন বাণিজ্য ও উন্নয়ন সহায়তার বিশেষ সুবিধার আর প্রয়োজন নেই।

রাজনৈতিকভাবে দেশটি তেমন অনুকরণীয় নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছে। যদিও দলটি ২০১৮ সালের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় অর্জন করেছে, সেই নির্বাচনটি যথেষ্ট অবাধ ও সুষ্ঠু না হওয়ায় ব্যাপকভাবে নিন্দা করা হয়েছে।

আশাবাদী হওয়া কঠিন যে, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দেশের আসন্ন ভোট অনেক বেশি বাধাহীন হবে। তা সত্ত্বেও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভুলে যাওয়া ‘গণতন্ত্র প্রথম’ পররাষ্ট্র-নীতি এজেন্ডায় বাংলাদেশকে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বোঝা সমান কঠিন।

গত মাসে একটি অস্পষ্ট বিবৃতিতে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ঘোষণা করেছে যে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া ক্ষুণ্ন করার জন্য তারা ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ক্ষমতাসীন দল এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ কমপক্ষে তিনজন বাংলাদেশির ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপের জন্য ‘পদক্ষেপ নিয়েছে’। বিবৃতিতে বলা হয়, শিগগিরই তালিকায় অন্যান্য নাম যুক্ত হবে।

এই ধরনের খোলাখুলি ধমকানো ন্যায্য বা সংবেদনশীল নয়। এটা ঠিক যে, আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধানে পুলিশ ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ক্রমবর্ধমান রাজনীতিকরণ হয়েছে। ২০১৩ সালে একটি বিক্ষোভের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করার ঘটনায় গত মাসে একটি সুপরিচিত মানবাধিকার গোষ্ঠীর নেতাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

একটি নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন পুলিশকে অনুসন্ধান এবং গ্রেপ্তারের অভূতপূর্ব ক্ষমতা দিয়েছে যা সহজেই অপব্যবহার করা যেতে পারে। ফ্রিডম হাউস আজকের বাংলাদেশকে ‘আংশিকভাবে মুক্ত’ হিসেবে বর্ণনা করেছে, যেখানে দেশটির অবস্থান পাকিস্তানের সামান্য ওপরে এবং নাইজেরিয়া, লেবানন এবং সিঙ্গাপুরের ঠিক নীচে।

তবু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ন্যায্য নয়। কারণ, মনে হচ্ছে যে, বাংলাদেশকে আলাদা করা হচ্ছে। যদিও স্টেট ডিপার্টমেন্ট লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন ও নাইজেরিয়াসহ অন্যান্য দেশের ওপর অনুরূপ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এটি মার্কিন অংশীদারদেরসহ অন্যদের টার্গেট করা থেকে বিরত রয়েছে। যেখানে সামরিক বাহিনী সম্প্রতি থাইল্যান্ড ও পাকিস্তানের মতো দেশে নির্বাচনে প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ করেছে।

বাংলাদেশি রাজনীতিবিদেরা ইতিমধ্যেই একে অপরকে ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে মার্কিন দূতাবাসে অভিযোগ জানাতে যাচ্ছেন’ বলে অভিযুক্ত করেছেন। শেখ হাসিনা এই বছরের শুরুর দিকে বিবিসিকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো আমাকে ক্ষমতায় চায় না। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করার যে কোনো বাস্তব প্রচেষ্টা এখন কলঙ্কিত হবে।

সম্ভবত ওয়াশিংটনের কেউ কেউ মনে করেন যে, ভারত ও তুরস্কের মতো গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণকারীদের তুলনায় বাংলাদেশের গুরুত্ব খুবই কম। যদি তাই হয়, এটা হবে অসাধারণভাবে অদূরদর্শী।

বাংলাদেশকে বিচ্ছিন্ন করার মূল্য হবে অনেক বেশি। এটি বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ। একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ যেটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে একটি ক্ষতবিক্ষত অভ্যন্তরীণ লড়াই করেছে, একটি পরিবর্তনের কারণে মৌলবাদীরা ভালোভাবে হেরে যেতে পারে।

এটি ইন্দো-প্যাসিফিকের একটি সুইং স্টেটও। জ্বালানি ও পরিবহন খাতে বিনিয়োগসহ বাংলাদেশকে জয় করার জন্য চীন সময় ও অর্থ ব্যয় করেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতে, ২০২২ সালে বাংলাদেশের প্রায় ৯০% জ্বালানি প্রকল্পের পাইপলাইন চীনা অর্থের ওপর নির্ভরশীল ছিল। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনকে ‘অর্থের ঝুড়ি’ এবং ‘আকর্ষণীয় ও সাশ্রয়ী মূল্যের প্রস্তাব’ নিয়ে আসছে বলে বর্ণনা করেছেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু ও মিত্র ভারত থেকে ফ্রান্স ও জাপান এ প্রসঙ্গে ওয়াশিংটনের ভুল পদক্ষেপ পূরণ করার চেষ্টা করা ছেড়ে দিয়েছে। গত আগস্টে, জাপান ঘোষণা করেছিল যে, বাংলাদেশ কেবলমাত্র চারটি দেশের মধ্যে একটি যারা ‘সমমনা দেশগুলোর নিরাপত্তা ও প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে’ পরিকল্পিত একটি নতুন কর্মসূচির অধীনে প্রতিরক্ষা সহায়তা পাবে।

অবকাঠামো, স্যাটেলাইট এবং আরও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ গত মাসে ঢাকা সফর করেন। এ দিকে চীনারা মার্কিন চাপের বিষয়ে অসন্তোষকে আনন্দের সঙ্গে পুঁজি করে নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং গত আগস্টে শেখ হাসিনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি বাংলাদেশের পক্ষে ‘বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করতে’ প্রস্তুত।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মধ্যে একটি অত্যন্ত ব্যক্তিগত লড়াই কয়েক দশক ধরে প্রাধান্য পেয়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার বয়স এখন ৭৬। তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ৭৮ বছর বয়সী। আমি মনে করি যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পর্যাপ্ত শিকড় রয়েছে পরবর্তী প্রজন্মের নেতাদের জন্য দেশের জন্য একটি নতুন দিকনির্দেশনা তৈরি করার জন্য।

কিন্তু যদি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির উপকরণ হিসেবে দেখা হয় তবে তা ঘটবে না। বাইডেনের দৃষ্টিভঙ্গি অব্যাহত থাকলে বিশেষত যদি এটি অসংগতভাবে প্রয়োগ করা হলে ঝুঁকি থেকে যায়। মার্কিন স্বার্থ এবং বাংলাদেশের স্বার্থ সম্পর্কে একটি আরও বাস্তব রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এ বিষয়ে একটি সূক্ষ্ম, আরও নমনীয় পন্থা গ্রহণের পরামর্শ দেবে।

আপনার অভ্যুত্থানকে সমর্থন করার বা কারচুপির নির্বাচনের প্রশংসা করার দরকার নেই। একই সময়ে, আপনার নিজেকে সব সময় খুব ঘরোয়া অভ্যন্তরীণ বিবাদে ঢোকানোর দরকার নেই, যা প্রায়শই ঘটে।

‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’

টানাপোড়েনের মধ্যে সংস্কার ও নির্বাচন

বার্ধক্য শুরু হয় পা দিয়ে

নির্বাচনবিষয়ক ভাবনা

টিউলিপ সিদ্দিকের পতন ঘটাতে বাংলাদেশি ও ব্রিটিশ রাজনীতির আঁতাত

নো ওয়ান কিলড তিন্নি!

শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই

ভ্যাট বৃদ্ধি ও জনজীবনে চাপ

সংবিধান সংস্কার

মানুষ কী চায়

সেকশন