Ajker Patrika
হোম > মতামত > উপসম্পাদকীয়

ডিজিটাল সমতা সব বয়সীর প্রাপ্য

হাসান আলী

ডিজিটাল সমতা সব বয়সীর প্রাপ্য

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর (রেজল্যুশন ৪৫/ ১০৬) ১ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ১৯৯১ সালের ১ অক্টোবর থেকে সদস্যদেশসমূহ দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করে আসছে। জাতিসংঘ এবারের প্রতিপাদ্য করেছে ‘ডিজিটাল ইকুইটি ফর অল এইজেস’ আর বাংলায় করা হয়েছে ‘ডিজিটাল সমতা সব বয়সের প্রাপ্যতা’।বেশির ভাগ মানুষ ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এই বাক্যের সঙ্গে পরিচিত।
ডিজিটাল পদ্ধতি চালু হলে সাধারণ মানুষ কী ধরনের উপকার পাবে, সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা ছিল না। করোনার টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক হওয়ার পর ডিজিটাল পদ্ধতি সম্পর্কে জনসাধারণের ধারণা স্পষ্ট হয়ে যায়।দেশের ৪ হাজার ৫৫০ ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। তৈরি হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। ভূমি ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন করতে মোট ৫৫টি জেলায় বিদ্যমান মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ান কম্পিউটারাইজেশন সম্পন্ন করার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। ভূমির পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে মোট ২১টি জেলায় ১৫২টি উপজেলার ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপসংবলিত প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। বেতন, পেনশন, ভাতা, বৃত্তি, উপবৃত্তির টাকা ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রদান করা হচ্ছে। ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ আত্মসাৎ, কর ফাঁকি, সম্পত্তির জবরদখল বন্ধ করতে ডিজিটাল পদ্ধতি রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে। বিভিন্ন অফিসে টেন্ডারকে কেন্দ্র করে নানান ধরনের গোলমাল, ঝগড়া-বিবাদ এড়াতে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। সমাজে অপরাধ দমন, মানুষের স্বাধীন চলাফেরার ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ভূমিকা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কোভিড-১৯ ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষকে খানিকটা স্বস্তি দিয়েছে। বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহকসংখ্যা ১৬ কোটি ৪২ লাখ ৮২ হাজার আর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর স়ংখ্যা ১০ কোটি ৬৪ লাখ। এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ২০১৯ সালে পৃথিবীতে পঁয়ষট্টি-ঊর্ধ্ব প্রবীণের সংখ্যা ছিল ৭০ কোটি। ২০৫০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে হবে ১৫০ কোটি। আমাদের প্রবীণ জনগোষ্ঠী প্রযুক্তি ব্যবহারে খানিকটা পিছিয়ে আছে। শিশুরা দ্রুত প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন করতে পারে, কিন্তু প্রবীণদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান অর্জন করতে কিছুটা বেশি সময় লাগে, তবে পারেন।

চেষ্টা করলে, লেগে থাকলে, সময় দিলে, আন্তরিক হলে প্রবীণদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান কলাকৌশল আয়ত্ত করানো সম্ভব হবে। জাতিসংঘের এবারের প্রতিপাদ্য ডিজিটাল সমতা সব বয়সের প্রাপ্যতা যথার্থ হয়েছে।

এই লক্ষ্য অর্জনে সাইবার নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন, বয়সবিদ্বেষী মনোভাব, মানবাধিকার, নৈতিকতা, জবাবদিহি বিবেচনায় নিতে হবে।

টেকসই উন্নয়ন অর্জনে জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রগুলো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অংশীদারত্বমূলক সমৃদ্ধির আদর্শের ওপর ভিত্তি করে সদস্য দেশগুলো কাউকে পেছনে না রেখে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়।

ডিজিটাল প্রযুক্তি-ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন এবং ডিজিটালভাবে তথ্য সংগ্রহ, সঞ্চয়, শেয়ার করে নেওয়ার অন্যান্য সরঞ্জাম, বিশ্বের অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের অনেকেই এসবের ওপর কাজ করেন। তরুণদের শিক্ষিত করতে বন্ধু, পরিবার-পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে।

এই প্রযুক্তিগুলো ডিজিটাল পাবলিক সার্ভিস, ডিজিটাল পেমেন্ট, অনলাইন লার্নিং, টেলি স্বাস্থ্যসেবা, অনলাইন শপিংসহ আরও অনেক কিছু করতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্বের প্রায় অর্ধেক লোক ইন্টারনেট ব্যবহার করে, বাকি অর্ধেক করে না। লাখ লাখ মানুষ কাজ পায় না, দূরবর্তী স্কুলে যেতে পারে না বা প্রযুক্তির সুবিধাগুলো গ্রহণ করতে পারে না।

ইন্টারনেট সংযোগহীন অনেকেই স্বল্পোন্নত দেশ, স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ, ছোট ছোট দ্বীপ, গ্রামীণ প্রত্যন্ত অঞ্চল, শহুরে দরিদ্র অঞ্চলে বসবাস করে। ডিজিটাল বিভাজন এখনো কমবেশি দেশ, সম্প্রদায় ও মানুষের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে। বিশ্বের সব মানুষকে ডিজিটাল জ্ঞানে দক্ষতা (মোবাইল প্রযুক্তিসহ ইন্টারনেট) অর্জনে সক্ষম করা এবং ডিজিটাল বিভাজন বন্ধ করা একটি চ্যালেঞ্জ, তা বিশ্ব সম্প্রদায়কে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে সমাধান করা প্রয়োজন।

উচ্চপর্যায়ের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি সরকার, সুশীল সমাজ, একাডেমিক প্রতিষ্ঠান ও প্রাইভেট সেক্টরের প্রতিনিধিদের সবার জন্য ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি মোকাবিলায় জরুরি বিষয়ে আলোচনা একত্র করে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার কাজে উন্নত বিশ্বের এগিয়ে আসতে হবে। 

তথ্যসূত্র: জাতিসংঘ ওয়েবসাইট

নেপালে আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব: আমাদের করণীয়

গ্রন্থাগারই আমাদের পথ দেখাবে

জটিল

কুকুর লেজ নাড়ে, না লেজে কুকুর নাড়ায়

বড় হওয়ার জন্যই ছোট হওয়া

কলেজগুলোতে শৃঙ্খলা ফেরাতে

আলুর জাত বাড়াবে রপ্তানির সুযোগ

শুধিতে হচ্ছে ঋণ

কবি সাজা বা কবি হওয়া

জনগণই ক্ষমতার উৎস—এ কি পরিহাস