হোম > মতামত > উপসম্পাদকীয়

ভ্যাট বৃদ্ধি ও জনজীবনে চাপ

মাসুমা হক প্রিয়াংকা

মাসুমা হক প্রিয়াংকা

অন্তর্বর্তী সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার ১৩ জানুয়ারি মাদারীপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ভ্যাট বৃদ্ধিতে তেমন কোনো অসুবিধা হবে না। সরকারের রাজস্ব ঘাটতি পূরণে ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয়টি যৌক্তিক বলে দাবি করে তিনি জানিয়েছেন, ভর্তুকি ও খাদ্য আমদানির জন্য রাজস্বের প্রয়োজন রয়েছে। একই সঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওএমএস কার্যক্রমের আওতা বাড়ানো হচ্ছে এবং নিম্ন আয়ের ৫০ লাখ মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল দেওয়া হবে। তবে এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজধানীর বাজারের অবস্থা ও ভোক্তাদের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন সুরে কথা বলছে।

সরকার গত সপ্তাহে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। এর প্রত্যক্ষ প্রভাব ইতিমধ্যেই বাজারে দেখা যাচ্ছে। আপেল, কমলা, টিস্যু, রড থেকে শুরু করে রেস্তোরাঁর খাবার পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। এমনকি মোবাইল ফোনের কল এবং ইন্টারনেট সেবার খরচও বেড়েছে। ফলমূলের দাম হঠাৎ এমনভাবে বেড়েছে যে সাধারণ মানুষ তা কিনতে পারছে না। এভাবে একের পর এক পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে বাজারে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে।

বাজার পর্যবেক্ষণ বলছে, ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরাসরি দাম বেড়ে যাচ্ছে। ১ হাজার টাকার রেস্তোরাঁ বিলের সঙ্গে এখন অতিরিক্ত ১৫০ টাকা ভ্যাট দিতে হচ্ছে, যা আগে ছিল মাত্র ৫০ টাকা। এমনকি সিগারেট, এলপিজি এবং নির্মাণ উপকরণের দামও লাফিয়ে বেড়েছে। বাজারের বিক্রেতারা স্বীকার করেছেন যে ভ্যাট বৃদ্ধির পুরো প্রভাব এখনো বাজারে আসেনি, নতুন চালান এলে দামের আরেকটি বড় ধাক্কা আসতে পারে।

একদিকে সরকার বলছে রাজস্ব ঘাটতি পূরণে এটি জরুরি পদক্ষেপ, অন্যদিকে সাধারণ মানুষ আর্থিক চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি ইতিমধ্যে উচ্চমাত্রায় পৌঁছেছে। সীমিত আয় ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষ খাবারের তালিকা কাটছাঁট করছে। নির্মাণ খাতের মতো বড় খাতেও ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে ভবন নির্মাণের খরচ বেড়ে গেছে, যা আবাসন সংকট আরও প্রকট করবে।

ভ্যাট একটি সমতল কর, যা সবাইকে সমান হারে দিতে হয়, তা সে গরিব হোক বা ধনী। অন্যদিকে, আয়কর ধনীদের ওপর বেশি চাপ দেয়। বাংলাদেশে এখনো উল্লেখযোগ্যসংখ্যক উচ্চ আয়ের মানুষ কর ফাঁকি দিচ্ছে বা আয়কর নীতিমালার বাইরে রয়েছে। আয়করের আওতা বাড়ালে রাজস্ব ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব ছিল।

সরকারি প্রশাসনিক খরচ কমানো এবং উন্নয়ন প্রকল্পে অযথা ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরলে বাজেট ঘাটতি সামাল দেওয়া যেত। অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ, সম্মেলন আয়োজন, বিলাসবহুল খাতে বাজেট বরাদ্দ কমালে মানুষকে এই কষ্ট ভোগ করতে হতো না।

যদিও আলী ইমাম মজুমদার ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে তেমন কোনো অসুবিধা হবে না বলেছেন, তবে বাজার ও জনগণের অভিজ্ঞতা তার বিপরীত। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য ওএমএস কর্মসূচি ও ভর্তুকি মূল্যে চাল বিতরণ কার্যক্রম কিছুটা আশার সঞ্চার করলেও মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণি সরাসরি পণ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের সামগ্রিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় এটা বলা যায় যে ভ্যাট বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতায় বড় আঘাত হানবে।

সরকার ভ্যাট বৃদ্ধি করলেও তা মানুষের জীবনযাত্রায় কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না—এমন ভাবনা বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বরং বাজারে দ্রব্যমূল্য আরও বাড়বে এবং সীমিত আয়ের মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হবে। খাদ্য উপদেষ্টা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে ওএমএস কার্যক্রমের ওপর গুরুত্ব দিলেও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য সরকারকে বিকল্প রাজস্ব নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় সীমিত আয়ের মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যও প্রকট হবে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজস্ব ঘাটতি মেটাতে ভ্যাট বৃদ্ধি করা সরকারের জন্য সহজ বিকল্প মনে হলেও এটি জনজীবনের ওপর যে বিরূপ প্রভাব ফেলছে, তা সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। একটি টেকসই অর্থনীতি গড়ে তুলতে হলে মানুষের ক্ষমতা বিবেচনায় এনে করনীতি প্রণয়ন করতে হবে। অন্যথায় এই চাপ মধ্য ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে আরও দুর্দশার দিকে ঠেলে দেবে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

মাসুমা হক প্রিয়াংকা, সমাজকর্মী ও শিক্ষার্থী

শঙ্কা যেন পিছু ছাড়তে চাইছে না

হাদি হত্যা এবং আগামী নির্বাচন

দেশের অর্থনীতির দ্বৈত বাস্তবতা

এবার নির্বাচনের দিকে চোখ থাকবে সবার

আন্তর্জাতিক মূল্যহ্রাস ভোক্তার কাছে পৌঁছায় না কেন

ভারতজুড়েই কি ফুটবে পদ্মফুল

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

সমুদ্রস্তরের উত্থান ও দ্বীপরাষ্ট্রের নিরাপত্তা

সংকটেও ভালো থাকুক বাংলাদেশ

মন্ত্রীদের বেতন-ভাতা নিয়ে কথা