হোম > মতামত > সম্পাদকীয়

তিন প্যাকেট বেনসন

সম্পাদকীয়

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাহফুজুর রহমান ঘুষ নিয়ে প্রচলিত একটি গল্পকে সম্ভবত খুব গাম্ভীর্যের সঙ্গে মেনে নিয়েছেন। গল্পটি এমন: ব্রিটিশ আমলের ঘটনা। এক তরুণ ম্যাজিস্ট্রেট বিলেত থেকে ভারতবর্ষে এসেছেন খুব বেশি দিন হয়নি। কাজের খাতিরে একটু-আধটু বাংলাও শিখেছেন। একদিন বিচারকাজ শেষে নিজ কক্ষে বসে আছেন তিনি। হঠাৎ তাঁর চাপরাশি হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকে ম্যাজিস্ট্রেটকে বললেন, ‘হুজুর, মিস্টার নাজির ইজ ইটিং ঘুষ।’ ম্যাজিস্ট্রেট বেচারা তো ‘ঘুষ’ শব্দের অর্থ জানেন না। চাপরাশিও ইংরেজিতে তেমন দক্ষ নন। তাই ঘুষের অর্থ বোঝাতে চাপরাশি ম্যাজিস্ট্রেটকে সোজা নিয়ে গেলেন নাজির সাহেবের রুমে। ম্যাজিস্ট্রেট দেখলেন নাজিরের টেবিলের ওপর এক কাঁদি পাকা কলা। এবং সেটি ‘ঘুষ’ হিসেবে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। সেখান থেকে কলা ছিঁড়ে খাচ্ছেন নাজির। ম্যাজিস্ট্রেট ভাবলেন, কলার প্রতিশব্দই মনে হয় ‘ঘুষ’! ফলটি তিনি খেয়েছেন, খুবই সুস্বাদু। এর পুষ্টিগুণও তাঁর জানা। তাই তিনি বললেন, ‘ওহ্, আই থিংক সামথিং রং। বাট ইউ আর ইটিং ঘুষ। ঘুষ ইজ গুড ফর হেলথ, এভরিবডি মাস্ট ইট ঘুষ।’

তবে মাহফুজুর রহমানের কাছে কলা নয় বরং ধূম্রশলাকাকে স্বাস্থ্যকর মনে হয়েছে। ৫ এপ্রিল সালমান কবীর নামের এক যুবক সিরাজদিখান থানায় জিডি করতে গেলে তাঁর কাছ থেকে এএসআই আদায় করে নেন তিন প্যাকেট বেনসন। থানার পাশের একটি দোকান থেকে ১২০০ টাকায় সিগারেটের তিনটি প্যাকেট কিনে ‘ঘুষ’ দিলে পাসপোর্ট হারানোর জিডি করতে পারেন সালমান। এ নিয়ে আজকের পত্রিকার শেষের পাতায় খবর প্রকাশিত হয় ৮ এপ্রিল।

যদিও মাহফুজুর রহমান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ফলে কারও মনে পড়তে পারে এই রুশ কৌতুকটির কথা: বড় এক আমলার বাড়িতে মা উপদেশ দিচ্ছেন তাঁর সন্তানকে, ‘হাত সব সময় পরিষ্কার রাখা উচিত। এ কারণেই কিছু খাওয়ার আগে, আর ঘুষ খাওয়ার পরে হাত পরিষ্কার রাখতে হয়।’

এ দেশে ঘুষ খাওয়া যেন কলা কিংবা সিগারেট খাওয়ার মতোই সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। আমাদের অজানা নয় যে থানা বা কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানে ঘুষ ছাড়া হয় না কাজ, নড়ে না ফাইল। অথচ অনেকেরই অজানা যে একটি সাধারণ ডায়েরি বা জিডি করতে কোনো ফি লাগে না, ঘুষ তো দূরের কথা। এমনটা প্রযোজ্য অনেক সরকারি কাজের ক্ষেত্রেও। যেমন বিনা মূল্যে যে জন্মসনদ পাওয়ার কথা, সেটি অনেকে পান ‘চা-পানি’ খাওয়ার বকশিশের বিনিময়ে। সাধারণ জনগণ বাধ্য হয়েই কাজ উদ্ধার করতে ঘুষ দেন, কেননা এমনটাই এখন ‘সিস্টেম’। সরকার পরিবর্তন যতই হোক, এই ‘সিস্টেমের’ যেন নট নড়নচড়ন। ঘুষ না দিলে যে ফাইল নড়ে না, ব্যাপারটা সে রকম।

আচ্ছা, কী ঘুষ দিলে ঘুষের এই ‘সিস্টেম’ বন্ধ করা যাবে, তা কি কর্তৃপক্ষ বলতে পারে? মাহফুজুর রহমানদের সিগারেট টানা শেষ হওয়ার আগেই এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।

কী ভয়ংকর!

শান্তি এখন খুব প্রয়োজন

শান্ত হোন

সংযোগ সড়কহীন সেতু

যা করণীয়

নিরাপত্তাহীনতা

আজ বিজয়ের দিন

রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণা

গুলিবিদ্ধ হাদি ও নির্বাচন

নির্বাচনের পথে দেশ