শীতের এ সময় চাহিদার তুলনায় সবজির সরবরাহ বেশি থাকায় পড়ে গেছে সবজির দাম। এতে ক্রেতার মধ্যে স্বস্তি ফিরলেও বিপদে পড়েছেন কৃষক। কারণ, এত কম দামে সবজি বিক্রি করে তাঁদের উৎপাদন খরচই উঠছে না। ফলে ভালো ফলনেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। দেশের অন্যতম বৃহৎ কাঁচাবাজার কুমিল্লার নিমসারে সবজির দরপতন নিয়ে আজকের পত্রিকায় মঙ্গলবার একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
জানা যায়, অধিক দামে সার, বীজ, কীটনাশক কিনে চাষাবাদ করে সবজি উৎপাদন করলেও বিক্রির বেলায় দাম পাচ্ছেন না কৃষক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিক্রির দরে তাঁদের জমি থেকে পণ্য তুলে বাজারে নেওয়ার খরচই উঠছে না।
গত বছর কৃষক সবজির ভালো দাম পেয়েছেন। এটা মাথায় রেখে এ বছরও বেশি করে সবজির আবাদ করেছেন তাঁরা। পেয়েছেন বাম্পার ফলনও। কিন্তু এবার সবজির দাম যা দাঁড়িয়েছে তাতে লাভ তো দূরে, খরচও উঠছে না প্রান্তিক কৃষকের। এমনকি কোথাও কোথাও খরচ না ওঠার শঙ্কায় অনেক কৃষক খেত থেকে সবজি তুলতেও নারাজ। কৃষকের উৎপাদন খরচ না ওঠার এমন চিত্র যেমন দুঃখজনক, তেমনি আমাদের কৃষিনির্ভর অর্থনীতির জন্যও অশনিসংকেত।
বেশি দাম ক্রেতার কষ্ট, দাম কমা মানে কৃষকের মাথায় হাত! বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজারে একটি নিয়ন্ত্রণবিধি থাকে। উৎপাদক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে আসা পর্যন্ত দামের ভারসাম্য থাকে। আমাদের এখানে বিষয়টির অনুপস্থিতি বাজারের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে। এই সুযোগের পুরো সদ্ব্যবহার করছে একটা বিশেষ গোষ্ঠী। তাই বাজারব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণবিধি থাকা দরকার।
কৃষক তাঁদের জীবিকার জন্য চাষাবাদ করেন। কিন্তু অতিরিক্ত উৎপাদনের ফলে যখন দাম কমে যায়, তখন তাঁরা অসুবিধার মধ্যে পড়ে যান। এটি কৃষকের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি করে এবং ভবিষ্যতে চাষাবাদে অনীহা তৈরি করতে পারে। অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরাও লোকসানের মুখোমুখি হয়ে পড়েন।
এই পরিস্থিতিতে সরকারের দায়িত্ব কৃষককে উন্নত জাতের বীজ, সার ও সেচ সুবিধা দিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করার পাশাপাশি, বাজারব্যবস্থার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া। আমরা মনে করি, কৃষিপণ্যের যথাযথ মূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের পদক্ষেপ জরুরি। সেই সঙ্গে পণ্যের বিকল্প ব্যবহার বাড়াতেও সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে। কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণে ‘মূল্য কমিশন’ গড়ে তোলা দরকার। সেই সঙ্গে সমবায়ের মাধ্যমে কৃষককে সংগঠিত করে, বাজারজাত করার মাধ্যমে মধ্যস্বত্বভোগীদের হস্তক্ষেপ কমাতেও
উদ্যোগ নিতে হবে। একই পণ্য কয়েকবার হাতবদল হওয়া, পরিবহন খরচ এবং চাঁদাবাজির কারণেও পণ্যের দাম ভোক্তা পর্যায়ে অসহনীয় হয়ে ওঠে। এ বিষয়গুলো যথাযথভাবে সমাধানের মাধ্যমে কৃষক ও ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে সরবরাহব্যবস্থার ঘাটতি দূর করতে হবে।
একটি টেকসই খাদ্য উৎপাদনব্যবস্থা গড়ে তুলতে সরকার, কৃষক, ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কুমিল্লায় সবজির দরদাম আমাদের সতর্ক করে দিয়েছে যে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও বেশি সচেতন হতে হবে।