জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী ছিলেন মূলত শিক্ষাবিদ। লেখক, গবেষক ও সম্পাদক হিসেবেও তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। কৃতী ছাত্র ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে ভাষা আন্দোলনে শরিক ছিলেন।
সমাজ ও রাজনীতি সচেতন মানুষ হিসেবে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেননি কখনো। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন মৃদুভাষী ও বিনয়ী এই শিক্ষানুরাগী।
১৯২৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহ জেলার দুর্গাপুর গ্রামে তাঁর জন্ম। তাঁর বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক। ১৯৪৫ সালে যশোর জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করে ভর্তি হন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৫২ সালে রেডিও পাকিস্তান ঢাকা কেন্দ্রে প্রোগ্রাম সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে ১৯৫৪ সালে ঢাকা কলেজে শিক্ষকতায় যোগ দেন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে অধ্যাপনা করেন।
১৯৭৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন। দুই মেয়াদে দায়িত্বপালন শেষে ১৯৮৪ সালে উপাচার্য পদ থেকে অবসর নেন। পরে তিনি বেসরকারি গণবিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯০-৯১ সালে দেশের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অবাধ বিচরণ ছিল জিল্লুর রহমান সিদ্দিকীর। অনুবাদ করেছেন ইংরেজি সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য অনেক বই। লিখেছেন প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি। পাঠকপ্রিয় হয়েছে তাঁর কবিতাও। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে বাঙালীর আত্মপরিচয়, শব্দের সীমানা, কোয়েস্ট ফর আ সিভিল সোসাইটি, দ্য কোয়েস্ট ফর ট্রুথ: সেক্যুলার ফিলোসফি বাই আরজ আলী মাতুব্বর, যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারে ছিলাম ইত্যাদি। এ ছাড়া বাংলা একাডেমির ইংরেজি থেকে বাংলা অভিধানের সম্পাদক তিনি।
সাহিত্য পত্রিকা পূর্বমেঘ ও দীপঙ্কর সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী স্বাধীনতা পুরস্কার, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের ১১ নভেম্বর তাঁর জীবনাবসান ঘটে।