হোম > মতামত > সম্পাদকীয়

মহিষ ছিনতাই

সম্পাদকীয়

শরৎচন্দ্রের ‘মহেশ’ গল্পে গফুর তার গরু মহেশকে গোহাটায় বিক্রির কথা চিন্তাও করতে পারে না, তার দুচোখ ভরে যায় জলে। গফুরের মতো গৃহপালিত প্রাণীদের এমন প্রেমময় প্রভু বাস্তবে হয়তো কমই আছে। নইলে ভারত থেকে অবৈধভাবে গরু-মহিষ চোরাচালানের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটত না এই অঞ্চলে। অনেক সময় খবর প্রকাশ পায়—ওই পারের পাহাড় থেকে গরুকে নিচে ফেলে দেওয়া হয় এই পারে পাঠানোর জন্য। ফলে গরু বেচারারা হাত-পা ভেঙে একপ্রকার পঙ্গু হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে নদী দিয়ে এপারে আসার জন্য ছেড়ে দেওয়া হয় অবলা প্রাণীদের। কখনো কখনো স্রোতের অতলে হারিয়ে যায় কিছু গরু-মহিষ।

মহিষ চোরাচালান নিয়ে ২০ জানুয়ারি আজকের পত্রিকায় যে খবরটি ছাপা হয়েছে তা একটু ভিন্ন। রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে চোরাই পথে মহিষ আনা হচ্ছে—এমন খবর পেয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা দুটি ভারতীয় মহিষ জব্দ করেন। যদিও চোরাচালানকারী ধরা পড়েননি। এরপর স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের কয়েকজন নেতা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁদের ওপর অতর্কিতে হামলা করে ছিনিয়ে নিয়ে যান মহিষ দুটি। এই ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে।

কয়েক মাস ধরেই সারা দেশের কিছু স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি-ছিনতাইয়ের যেসব অভিযোগ উঠছে, তা রাজনৈতিক দলটির জন্য সত্যিই লজ্জাজনক। আরও বেশি লজ্জার—দলটির কেন্দ্র এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে পারছে না।

তবে গোদাগাড়ীর এই মহিষ ছিনতাইয়ের ঘটনাটি যেন মুদ্রার দুই পিঠে মুদ্রিত হয়েছে। এক পিঠে রয়েছে জনগণের কাছে দল হিসেবে বিএনপির স্বচ্ছতার চ্যালেঞ্জ। অপর পিঠেরটি আরও গুরুত্বপূর্ণ—আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি চ্যালেঞ্জ। দুটো পিঠই দেশের নিরাপত্তা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বিজিবির কাজ দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাদের ওপরই যদি এ ধরনের হামলা হয় তাহলে পুরো দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রশ্নবিদ্ধ হওয়াটা স্বাভাবিক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হয়েও কেন তাঁরা দুর্বৃত্তদের হাত থেকে দুটি মহিষ বাঁচাতে পারলেন না? তাঁরা কি যথেষ্ট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন? যদি প্রশিক্ষণ যথেষ্ট না হয়ে থাকে তাহলে এর জন্য তাঁদের নিয়োগকর্তারা কি দায়ী নন?

একসময় এ ধরনের ছিনতাইকারীরা অন্তত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভয় পেত, আর এখন তাঁদের ওপর চড়াও হয়! কোন সাহসে? কোন ক্ষমতার প্রভাবে? কে বা কারা তাদের ওপরে বসে ছড়ি ঘোরায়? আর যখন কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এমন হীন কাজে যুক্ত হন, তখন আরও প্রশ্ন ওঠে—তাঁরা কি রাজনৈতিক ক্ষমতার দাপটে এসব করেন? তাহলে তো তাঁরা নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য রাজনীতির মুখোশ পরে ঘুরে বেড়ান। এমন কর্মীদের জন্য কী ‘তোহফার’ ব্যবস্থা করেন দলের প্রধানেরা?

এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধে সরকারের উচিত সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান রোধে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক পরিচয়ে উন্মত্ততা রোধ করা।

কৃষক কেন কাঁদে

আবার সন্ত্রাসের আশঙ্কা

ফ্যাসিবাদ নিয়ে কথা

ঘোষণাপত্র নিয়ে মতপার্থক্য

সন্ত্রাসী!

নির্বাচনবিষয়ক ভাবনা

সংবিধান সংস্কার

ভুল ও ভোগান্তি

বৈষম্য ও দ্বন্দ্ব

সহিংসতা হয়নি তা নয়

সেকশন