বিএনপি কোনোভাবেই তাদের নেতা-কর্মীদের সামাল দিতে পারছে না। এবার এক বিএনপি নেতা চাঁদাবাজি নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড করেছেন নাটোর সদর উপজেলার তেবাড়িয়া ইউনিয়নের লোচনগড়ে। সেখানে আল চিশতী নামের এক বাউল সাধকের মাজারে বাউলসংগীতের আয়োজন করা হয়েছিল। বিএনপির এক নেতা চেয়েছিলেন চাঁদা। পাননি। আর তাতেই গোসসা করে তিনি তোরণ, প্যান্ডেল, মাজার, খানকা ও দরবারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন।
স্থানীয় বিএনপি এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, চাঁদাবাজির সঙ্গে বিএনপির কেউ জড়িত নয়। এর আগে একজন মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরিয়েছিলেন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জামায়াত কর্মীরা। জামায়াতও অস্বীকার করে বলেছিল, হোতাদের কেউ জামায়াতের নয়। তারপরও কেন তারা দুজন জামায়াত কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিল, সে ব্যাপারটা আর খোলাসা করেনি।
বর্তমানে রাজনীতির মাঠে যে খেলোয়াড়েরা রয়েছে, নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে বিএনপির অবস্থান সবচেয়ে ওপরে। ক্ষমতার পালাবদলের পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব গা ঢাকা দিয়েছেন।
আগস্টের শুরুতে মনে হচ্ছিল, ক্ষমতা বুঝি বিএনপির দিকে হেলে রয়েছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের ছবি দিয়ে বিশাল সব ব্যানারে ছেয়ে গিয়েছিল রাজপথ। কিন্তু আদতে রাজনীতি কোন দিকে হেলে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে এখনো ধোঁয়াশা কাটেনি। মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা, একাত্তরকে অস্বীকার করা, সংবিধানকে অবজ্ঞা করা, একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে মদদ দেওয়াসহ নানা ঘটনার সাক্ষী এখন জনগণ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের আচরণও প্রশ্নের বাইরে নয়। উপদেষ্টা পরিষদের কাজেও অনেকে সন্তুষ্ট নয়। এ অবস্থায় নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করে বিজয়ী দলের হাতে সংস্কারের ভার তুলে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার বিদায় নিলে দেশের জনগণ খুশি হতো। এই অল্প সময়ের মধ্যেই বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সরকার পরিবর্তনের পর দেশের জনগণ যে আশার আলো দেখেছিল, তা যেন অনেকাংশেই ম্লান হয়ে গেছে। এ রকম একটি সময়ে কতটা সংস্কার করবে অন্তর্বর্তী সরকার আর কতটা সংস্কার করবে নির্বাচনে বিজয়ী দল, তা নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে। এ রকম একটি অবস্থায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা যদি ধৈর্যচ্যুত না হয়ে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতেন, তাহলে তাঁদের প্রতি হয়তো জনসমর্থন বাড়ত। কিন্তু ১৫ বছরের খিদে মেটানোর জন্য বিএনপির নেতা-কর্মীরা নির্লজ্জের মতো চাঁদাবাজি-দখলদারির সঙ্গে এভাবে সম্পৃক্ত হবেন, সেটা কেউ ভাবেনি। বিএনপির উচ্চপর্যায় থেকে এই ধরনের অরাজক আচরণের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দেওয়া সত্ত্বেও তৃণমূল পর্যায়ে এই চাঁদাবাজি, হুমকি-ধমকি, মামলা-বাণিজ্য চলছেই।
বিগত পাঁচ মাসের মধ্যেই স্থানীয় জনগণ বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি দেখেছে। এই দেখা যে চোখ আর মনের জন্য মোটেই সুখকর নয়, সেটা বোঝা যাচ্ছে। অনেকেই বলাবলি করছেন, নির্বাচন আসার আগেই যারা নিজেদের এ রকম পরিচয় তুলে ধরছে, নির্বাচিত হলে তারা না জানি কী করে!
বিএনপির উচ্চপর্যায় থেকে স্থানীয় চাঁদাবাজ ও দখলবাজদের বিরুদ্ধে কড়া নির্দেশ না এলে বিএনপি এই লড়াইয়ে পিছিয়ে যাবে।