জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে আসা ২ কোটির বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা বাতিল করে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এই মামলার সাজা বাতিলের আপিল শুনানি শেষে আজ বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির বেঞ্চ সর্বসম্মতিক্রমে এই রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে আদালত বলেছেন, সর্বসম্মতিক্রমে সবার আপিল মঞ্জুর করা হলো। সেসঙ্গে হাইকোর্ট ও বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করা হলো। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বেকুসুর খালাস দেওয়া হলো। মামলাটি ‘বিদ্বেষপূর্ণ’ বলে গণ্য হলো। যারা আপিল করেননি, এই রায় তাঁদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে সাজাপ্রাপ্ত সকলে তাঁদের মর্যাদা ফিরে পেলেন এবং তাঁরা যে নির্দোষ তা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলো। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে হওয়া অনাকাঙ্খিত কার্যক্রমের অবসান ঘটবে।
খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। শরফুদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। কাজী সালিমুল হক কামালের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও অনীক আর হক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আসিফ হাসান।
রায়ের পর জয়নুল আবেদীন বলেন, মামলার ‘সারবত্তা কিছুই ছিল না’। এই মামলায় সাজা দেওয়ার মতো কোনো উপাদান ছিল না। সেই মামলায় হাইকোর্ট বিভাগ ৫ বছর থেকে ১০ বছর করেছেন— এটা খুবই দুঃখজনক। তখন বিচার ব্যবস্থা বলে কিছুই ছিল না। ফ্যাসিস্ট সরকার যেভাবে বলতো. সেভাবে রায় হতো। আজকে মনে হয়েছে বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করেছে। এই প্রসিকিউশন ছিলো ম্যালিশাস; এটি ছিল বিদ্বেষমূলক এবং প্রতিহিংসামূলক মামলা।
ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, এই মামলা ছিল শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত জিঘাংসা। তিনি (শেখ হাসিনা) সংসদে দাড়িয়ে মিথ্যা বলতেন। বলতেন, তিনি (খালেদা জিয়া) এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। এই রায়ে খালেদা জিয়া নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। আজকে প্রমাণিত হলো, খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের ওপর অবিচার করা হয়েছিল।
দুদকের আইনজীবী আসিফ হাসান জানান, মোট চারটা আপিল ছিলো। আপিল বিভাগ চারটিই মঞ্জুর করেছেন। হাইকোর্ট ও বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করেছেন। সেইসঙ্গে যারা আপিল করতে পারেননি, তাদেরকেও খালাস দিয়েছেন। পুরো মামলাকেই ‘ম্যালিশাস প্রসিকিউশন’ বলেছেন আদালত।
তিনি বলেন, ‘রায়টি দুদককে জানাব। পরে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বকশীবাজারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও জিয়াউর রহমানের ভাগনে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়া। অপরদিকে খালেদার সাজা বৃদ্ধি চেয়ে আবেদন করে দুদক। উভয় আপিল শুনানি শেষে একই বছরের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন।
এতিমদের সহায়তার উদ্দেশ্যে বিদেশ থেকে পাঠানো ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই এই মামলা করে দুদক।