পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধসহ সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত বিচারের অভিপ্রায়ে জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ঘোষণাপত্রের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। ঘোষণাপত্রে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে ছাত্রদের ভূমিকার কথাও স্বীকার করা হয়েছে।
বিএনপির দলীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রটি জানায়, এই ঘোষণাপত্র নিয়ে ৩১ দফার মতো শরিক ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তাদের মতামত নেবে বিএনপি।
বিএনপির তৈরি করা ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের ফ্যাসিবাদবিরোধী তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের অভিপ্রায় প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের জনগণ সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন, ফ্যাসিবাদী শাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ, আইনের শাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে বিদ্যমান সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কার সাধনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণ বিগত ১৬ বছরের দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রাম এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গুম-খুন, হত্যা, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়নের এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধগুলোর দ্রুত উপযুক্ত বিচারের দৃঢ় অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে। বাংলাদেশের জনগণ ন্যূনতম সময়ে আয়োজিতব্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত জাতীয় সংসদে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে দেশের মানুষের প্রত্যাশা, বিশেষত তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি ও শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতির পাশাপাশি সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছে।
বিএনপির ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলা হয় এবং এর পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ুকে বিপন্ন করা হয়। বাংলাদেশে বিদেশি রাষ্ট্রের অন্যায় প্রভুত্ব, শোষণ ও খবরদারির বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে তল্পিবাহক আওয়ামী লীগ সরকার নিষ্ঠুর শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দমন করে। ধারাবাহিক তিনটি নির্বাচনী প্রহসনের মধ্য দিয়ে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার এ দেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে।
এতে আরও বলা হয়, ফ্যাসিবাদের পতনে ছাত্র-জনতা তথা সর্বস্তরের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে অবৈধ, অনির্বাচিত, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। অবৈধ সংসদ ভেঙে দেওয়া হয় এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম কোর্টের মতামতের আলোকে সাংবিধানিকভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গত ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।