দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারকে ‘মেকি সরকার’ বলে অভিহিত করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনীতির ইতিহাসে ডামি প্রার্থী, ডামি ভোটার, ডামি এজেন্ট, ডামি পর্যবেক্ষক, ডামি ফলাফল, ডামি এমপি, ডামি শপথের মধ্য দিয়ে ওয়ান-ইলেভেনের কৃষ্ণতম দিবসে একদলীয় ফ্যাসিবাদের হুংকারে আরেকটি কৃষ্ণতম মেকি সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে।’
আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রিজভী বলেন, দেশের জনগণ এবং গণতান্ত্রিক বিশ্ব এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। এই নির্বাচনের প্রক্রিয়াসহ এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানসহ সবকিছুই প্রত্যাখ্যাত, অগ্রহণযোগ্য।
নতুন সরকার প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি গভীর ষড়যন্ত্রের নীলনকশার মাধ্যমে দেশটাকে প্রভুদের করদ রাজ্যে পরিণত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় আবারও সেই একই দিনে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করল ডামি ভোটের অসাংবিধানিক, প্রভুদের আজ্ঞাবাহী হাসিনার সরকার। দেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র তারা সফল করল।’
রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পরাজিত নেতারাই শেখ হাসিনাকে অবৈধ ভোটের প্রধানমন্ত্রী উপাধি দিচ্ছেন। এবার যে নির্বাচনের নামে ভোট ডাকাতি হয়েছে, তা নিজেরাই সংবাদ সম্মেলন করে তুলে ধরছেন। সংসদে বিদ্যুৎ বিক্রি করা এক গানের শিল্পী বলেছেন, মৃত মানুষ বিদেশে আছে, তাঁদের ভোটও দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী ও দলটির প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ বলেছেন, নির্বাচনে অলৌকিক শক্তি কাজ করায় ভোটে কারচুপি হয়েছে, একচেটিয়া ভোট ডাকাতি হয়েছে। বরগুনা-১ আসনের আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেছেন, ভোটের ফল এক হাতে তৈরি করা হয়েছে। একজন বলেছেন, গণভবন থেকে ফলাফল এসেছে। পরাজিত কুইন্স পার্টির এক নেতা বলেছেন, শেখ হাসিনা তামাশার নাটক করেছেন। কাকে কত টাকা দিয়ে নির্বাচনে নেওয়া হয়েছে, তা প্রকাশ্যে হিসাব দিচ্ছেন পরাজিত প্রার্থীরা। থলের বিড়াল সব আস্তে আস্তে বেরোচ্ছে। সব অপকর্মের খবর ফাঁস করছে। এত দিন বাংলাদেশ তথা বিএনপি বলেছে, শেখ হাসিনা ভোট ডাকাত আর এখন আওয়ামী লীগের লোকজনই বলছে, শেখ হাসিনা ভোট চোর, শেখ হাসিনা ভোট ডাকাত।’
এদিকে দলের কারাবন্দী নেতাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ এনে রিজভী বলেন, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গুরুতর অসুস্থ। কিন্তু তাঁরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এ রকম অসংখ্য নেতা-কর্মী অসুস্থ। তাঁদের অনেকের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করা হচ্ছে। জেলখানা যেন হিটলারের ক্যাম্প। এই কারাগারকে আরেক ভয়াবহ গ্যাস চেম্বারে পরিণত করেছে সরকার।
নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, সরকারের দমন-পীড়ন অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ২১৬ জন নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাকসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।