ঢাকা : বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন বলে দাবি করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মবেশে জিয়াউর রহমান পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেছিলেন বলেও দাবি করেছেন তিনি।
সমসাময়িক বিষয় নিয়ে রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, জিয়াউর রহমান স্বাধীনতাযুদ্ধে কী করেছেন সেগুলো ধীরে ধীরে বের হয়ে আসছে। যুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানিদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন, এগুলো বেরিয়ে আসছে।
‘মুক্তিযুদ্ধের সময় কোনো মুক্তিযোদ্ধা কারো বাড়িতে পানি খেয়েছেন, সেই অপরাধে সেই বাড়ির ওপর নির্যাতন হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় কোনো মুক্তিযোদ্ধা কারো বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন সেটি জানার পর রাজাকার, আলবদর ও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেই বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা কারো বাড়ি একবেলা ভাত খেয়েছেন, সেই অপরাধে সেই বাড়ির বয়স্ক পুরুষদের ধরে নিয়ে গেছে, নির্যাতন করেছে, এমনকি মেরেও ফেলেছে। আর জিয়াউর রহমান রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেন আর তাঁর স্ত্রী-পুত্ররা পাকিস্তানিদের ক্যান্টনমেন্টে একেবারে নতুন বউয়ের আদরে থাকে, এটি কি কখনো সম্ভব? এটি কখনো সম্ভব নয়।’
হাছান মাহমুদের ভাষ্য, জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন শুরু করার পর মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর ভূমিকা কী ছিল সেটি প্রমাণিত হয়। শাহ আজিজুর রহমানকে তিনি প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিলেন। এই শাহ আজিজুর রহমান জাতিসংঘে গিয়ে পাকিস্তানের পক্ষে ওকালতি করেছিলেন। জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মবেশে আসলে পাকিস্তানিদের সহযোগিতা করেছিলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রচণ্ড মিথ্যাচার করেন। সেটার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে স্বাধীনতার ৫০তম বর্ষপূর্তিতে হেফাজতের ব্যানারে বিএনপি-জামায়াতের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণে যে তাণ্ডব হয়েছে সেটিকে অস্বীকার করা এবং অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর অপচেষ্টা করা। আসলে মিথ্যা বলতে বলতে কখন আবার বলে বসেন খালেদা জিয়ার করোনা হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী। এ ধরনের জঘন্য মিথ্যাচার একজন সিনিয়র রাজনীতিবিদের কাছ থেকে কখনো কাম্য নয়।
মুক্তিযুদ্ধের প্রতিষ্ঠিত বিষয় নিয়ে মিথ্যাচার করলে আইন অনুযায়ী বিচার করা যায়। যাঁরা এসব নিয়ে মিথ্যাচার করছেন, কেন তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না—এমন প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যেকোনো নাগরিক সংক্ষুব্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে আদালতে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, জনগণের উত্তাল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ভেসে যাবে—এ কথা আমরা ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার ছয় মাস পর থেকে শুনে আসছি। গত ১২ বছর ধরে শুনে আসছি। বাস্তবতা হচ্ছে, জনগণের রায় নিয়ে পরপর তিনবার শেখ হাসিনা সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করছেন।
তথ্যমন্ত্রী জানান, গণমাধ্যমকর্মী আইন চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং নেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় ভেটিং করে দিলে সেটি মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।
‘এই আইন পাস হলে সাংবাদিকদের আর শ্রমিক হিসেবে অভিহিত করা হবে না। সম্প্রচারের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের আইনি সুরক্ষা হবে। দেশে ৩৪টি টেলিভিশন চ্যানেল ও ২২টি রেডিও রয়েছে—এসব প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের সুরক্ষা হবে। এই আইন হলে যেকোনো সময় ছাঁটাই করা, কথায় কথায় বিদায় করে দেওয়া—এগুলো অনেকটা বন্ধ হয়ে যাবে, সবাইকে আইনি সুরক্ষা দেওয়া যাবে।’