ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, সারা দেশে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ এবং নারীদের অধিকার হরণের ঘটনায় টিআইবি অত্যন্ত সংক্ষুব্ধ। মাগুরার শিশুটির মৃত্যুদিবস জাতীয় একটা কলঙ্কের দিবস। ধর্ষণ প্রতিরোধ দিবস হিসেবে এই দিনটাকে সব সময় মনে রাখা উচিত। টিআইবি দিনটাকে ধর্ষণ প্রতিরোধ এবং নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালন করতে চায়। তিনি ধর্ষণ নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানিয়েছেন।
সারা দেশে নারী নিপীড়ন ও ধর্ষণের প্রতিবাদে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে আজ রোববার মানববন্ধনে এসব কথা বলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘৫৪ বছরেও বাংলাদেশের নারীরা স্বাধীনতা পায়নি। স্বাধীনতা যদি থাকত তাহলে এভাবে ধর্ষণ, নির্যাতন বা অধিকার হরণ হতো না। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর আমরা নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। যেখানে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের কথা বলছি, সেখানে পদে পদে নারীর প্রতি বৈষম্য কীভাবে সহ্য করা যায়?’
নারী অধিকারকর্মীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনের আহ্বান জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে যারা থাকেন, তাঁদের আচরণে, কথাবার্তায় ও চর্চায় আমরা নারীবান্ধব অবস্থা দেখতে পাই না। নারীদের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্বে থাকা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যখন ‘ধর্ষণ’ শব্দটা গণমাধ্যমে ব্যবহার না করতে অনুরোধ করেন, তখন আমাদের অবাক হতে হয়। তাঁদের প্রতি আমাদের ঘৃণা প্রকাশ করতে হয়। কারণ, এর মাধ্যমে ডিএমপি কমিশনার ধর্ষকের পক্ষ নিয়েছেন। তাঁর এ বক্তব্য প্রত্যাহার করা উচিত।’
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘যাঁরা মনে করছেন বিজয়ী হবেন, নির্বাচিত হবেন, সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন এবং রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন, তাঁদের কাছে আমাদের আহ্বান, আপনারা অত্যন্ত জোরালোভাবে, সমতা, নারী অধিকার ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে পরিষ্কার ঘোষণা দেন।’ এ সময় তিনি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অবস্থান পরিষ্কার করার আহ্বান জানান।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলেছে, ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ‘ধর্ষণ’ শব্দটি ব্যবহার না করার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি সুপারিশ পুলিশের অব্যাহত স্বৈরতান্ত্রিক চর্চার প্রতিফলন। ধর্ষণের সংবাদ কম করে প্রচারের পরামর্শ দিয়ে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী কার্যত ধর্ষকের সুরক্ষার পথ প্রশস্ত করতে চাইছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশে নারী ও কন্যাশিশুর নির্যাতন ও ধর্ষণ নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি এর মাত্রা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্রই কন্যাশিশুসহ সব বয়সী নারী ভয়াবহ সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। নৃশংসতার মাত্রা ও সংখ্যা বিবেচনায় নারীর প্রতি সহিংসতায় দেশবাসী আতঙ্কে আছে। এই পরিস্থিতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
নারী-পুরুষের সমতার আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশের ধারাবাহিক অবনতির কথা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার সাম্প্রতিক প্রবণতা ব্যাপক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ধর্মান্ধতা ও ধর্মের অপব্যাখ্যাকে পুঁজি করে নারী ও কন্যাশিশুর বহুমাত্রিক অধিকার হরণ।