অনলাইন ডেস্ক
শিল্পোন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আদানি গ্রুপের মতো বিদেশি কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগের আগ্রহকে ইতিবাচক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। তবে, আদানিসহ বিদেশিদের সঙ্গে যেকোনো চুক্তির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এই গুরুত্ব স্বীকার করেন। গত মঙ্গলবার এই সাক্ষাৎকারে একটি অংশ প্রকাশিত হয় সংবাদ সংস্থাটির ওয়েবসাইটে।
বাংলাদেশে আদানি গ্রুপের জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে এএনআইকে বিএনপির চেয়ারপারসনের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক সহায়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো বর্ধনশীল দেশের জন্য শিল্পায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্লিন এনার্জি বা পরিবেশবান্ধব জ্বালানির প্রয়োজনীয়তা আছে। আদানি গ্রুপের এগিয়ে এসে এ খাতে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখানো নিঃসন্দেহে ইতিবাচক।’
এসব চুক্তির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের ওপরও গুরুত্বারোপ করে শামা ওবায়েদ বলেন, ‘তবে একই সঙ্গে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, আদানি গ্রুপ বা অন্য যেকোনো (দেশি-বিদেশি) বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে করা যেকোনো চুক্তি স্বচ্ছ হতে হবে এবং সেগুলোকে গভীরভাবে পর্যালোচনা করতে হবে।’
এ সময় শামা ওবায়েদ ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে সংঘটিত দুর্নীতির বিষয়টি তুলে ধরে ভবিষ্যৎ চুক্তিগুলোতে অবশ্যই বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর জোর দেন।
শামা ওবায়েদ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের চুক্তির বিষয়বস্তু জানা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, আমরা অতীতে দেখেছি, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে যেকোনো চুক্তি হলে তাতে বিপুল পরিমাণ দুর্নীতি জড়িয়ে থাকত। আমরা এখন আর বাংলাদেশে তা দেখতে চাই না।’
বিএনপির এই নেত্রী বলেন, ‘আমরা যখন নতুন বাংলাদেশের কথা বলি, তখন আমরা স্বচ্ছতার কথা বলি, বৈধতার কথা বলি, জবাবদিহির কথা বলি। তাই আমরা আদানি গ্রুপ বা অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমন চুক্তি চাই, যা স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের জন্য উপকারী—দুই-তিনজন ব্যক্তির পকেট ভারী করার জন্য নয়।’
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা গত বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান। গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে এবং বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
এদিকে, মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে কাঠামোগত সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। ‘আফটার দ্য মনসুন রেভল্যুশন: আ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ৫০ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদনটিতে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দমন-পীড়নের সমাধানে প্রয়োজনীয় সংস্কার পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বিচার বিভাগ, প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষমতার ভারসাম্য ও রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে।