সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায়ে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড হলেও, তাঁর কঠোর শাস্তি চান তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। বছরের পর বছর জেলে রেখে সাঈদীর ভরণপোষণ ও আদর আপ্যায়নকে সমর্থন করতে পারছেন না তিনি।
তথ্য প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন জানিয়ে মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার মাধ্যমে আমন্ত্রণপত্র পাঠান। বুধবার নিজের দপ্তরে তিনি বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আমার অনুভূতির কথা বলব, আমি সরকার বা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বলছি না। আমার অভিব্যক্তি দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মতো একটা কুখ্যাত রাজাকার, তাঁর যুদ্ধকালীন সময়ে যে ইতিহাস সেটা সবাই জানি, যিনি একের পর এক বাংলাদেশে অস্থিতিশীল ঘটনা ঘটনার জন্য দায়ী এবং তাদের সমর্থকেরা জামায়েতে ইসলাম, ছাত্রশিবির বা আরেকটা ভার্সন আছে হেফাজতে ইসলাম, সবাই না, সবার কথা বলছি না, উগ্রপন্থী যারা। যখন সাঈদীর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে, যখন সাজা হয়ে যাচ্ছে তখন চাঁদের মধ্যে সাঈদীর ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার ঝড় তুলে ফেলল। তার মানে কত বড় পুণ্যবান লোক, আলেম।’
‘এই সাঈদীর বিচার কার্যক্রম শেষ হয়েছে। তাঁকে এভাবে বছরের পর বছর কারাগারে রেখে, ভরণপোষণ দিয়ে, আদর আপ্যায়ন করে মানেটা কি? আমি এই জিনিসটাকে কোনোভাবেই সমর্থন করতে পারি না। কোনো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান এবং এই বাংলাদেশের কিছু মানুষ ছাড়া যারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী তাঁরা কেউই চায় না এই রাজাকারটাকে এভাবে কারাগারে সুন্দরভাবে আদর আপ্যায়ন করা। এর বিচার হওয়া উচিত। প্রশ্ন করবেন হয়তো তাহলে আপনি বিচার করেন। আমি কেমনে করব, এটা আইনমন্ত্রী মহোদয় ছাড়া তো করতে পারব না, আদালত ছাড়া তো হবে না। আমি বলতে চাই এ বিষয়টা নিয়ে সোচ্চার হওয়া উচিত। আমি আপনাদের সবার সহযোগিতা কামনা করছি।’
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড হলেও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায়ে সাঈদীর সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় সর্বোচ্চ আদালত। এরপর থেকে জেলে আছেন তিনি। আদালতের বিচারের মাধ্যমেই সাঈদী জেলে আছেন, তাহলে বিচার কি ঠিক হয়নি, চ্যালেঞ্জ করছেন কীভাবে, এই প্রশ্নে মুরাদ বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ না। ‘আমি বলছি যে, তাঁর যে অপরাধ সে অপরাধের মাত্রাটা মুক্তিযোদ্ধাদের, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের, সাধারণ মানুষ যারা, দেশপ্রেমিক নিরীহ মানুষ তাদের এই বিষয়টা খুব কষ্ট দেয়।’
সর্বোচ্চ আদালত সাঈদীকে যে শাস্তি দিয়েছে, আপনি কি সেই সাজাকে চ্যালেঞ্জ করছেন? এই প্রশ্নে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘না না, আমি চ্যালেঞ্জ করব কেন?’ তাহলে নতুন করে কীভাবে বিচারের দাবি তুলছেন, এ প্রশ্নে মুরাদ বলেন, ‘নতুন করে তুলছি না। আমি বললাম এটা আমাদের কাছে একটা অনুভূতিতে লাগে আরকি। আমি আমার অনুভূতির কথা বলছি ভাই। আমাকে আপনারা মিস ইন্টারপ্রিয়েট কইরেন না দয়া করে। বিচার বিভাগকে বা আদালতকে কোনোভাবেই কোনো কথা বলার কোনো সুযোগ আমার নাই। আমি সেটা বলিও।’
তাহলে আপনার চাওয়াটা কি, এ প্রশ্নে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমার চাওয়াটা হলো তাঁর কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। যে পরিমাণ অপরাধ উনি করেছেন।’ আদালতে তো সেই ফয়সালা হয়ে গেছে, এটা জানানোর পর প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো সেটা নিয়ে কিছু বলিনি।’ কঠোর শাস্তি বলতে কি মৃত্যুদণ্ড চাচ্ছেন, রিভিউ চাচ্ছেন, এ প্রশ্নে মুরাদ বলেন, ‘এটা হতে পারে। আমার বড় ভাই বিচারপতি, হাই কোর্টের রিট পিটিশন বেঞ্চে আছে। আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলেছি, এটার আইনি প্রক্রিয়াটা কি হতে পারে। আইনমন্ত্রী মহোদয় এটার সব থেকে ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। এ বিষয়টা নিয়ে আমরা কথা বলছি এ জন্য যে আসলে এ ইস্যুটা আমাদের জন্য একটা পীড়াদায়ক। আসলে অন্য কিছু না। আমি কোনো চ্যালেঞ্জ বা কোনো কিছু নিয়ে কোনো প্রশ্ন কিন্তু তুলি নাই। আমি বলতে চাচ্ছি যে এই ইস্যুটা একটা পীড়াদায়ক ইস্যু।’
সাঈদীর অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি হয়নি, আপনি কি এটাই মনে করছেন, এমন জিজ্ঞাসায় মুরাদ বলেন, ‘আমি এটা নিয়ে কথা আর বাড়াতে চাচ্ছি না, এটা বোধ হয় একটু ই হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে চলে যাচ্ছে। আমি কিন্তু অন্য কিছু মিন করতে চাইনি। আমি আহ্বান জানিয়েছি, আমি ওটার মধ্যেই আছি। আমার মনে হয় আরও কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত ছিল। সেটা আইনি প্রক্রিয়ায় যাবে, রিভিউ হতে পারে। আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলব। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলা ছাড়া আমি বলতে পারি না।’