গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের দাবিতে চলমান আন্দোলনে শ্রমিক ও ছাত্রনেতাদের ওপর পুলিশের হামলার জন্য প্রধানত সরকার দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ।
আজ বুধবার বিকেলে বকেয়া মজুরি ও ঈদের বোনাসের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনের সামনে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির ‘মাছ-মাংস-চাল-মজুরির স্বাধীনতা চাই’ শীর্ষক সমাবেশে এ কথা বলেন আনু মুহাম্মদ।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকার যখন বলে, শ্রমিকের বেতন বকেয়া যে আছে, তাতে সরকার কী করবে, এইটা মালিকপক্ষের দেখার বিষয়। এটি চরম দায়িত্বহীনতার কথা। এ ধরনের কথা গত ফ্যাসিবাদী আমলে আমরা শুনে এসেছি। কিন্তু কোনো দেশের ভেতর যদি অনিয়ম হয়, কোনো কোম্পানি বেআইনি কিছু করে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা সরকারের। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি শ্রমিককে বেতন না দেয়, সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। অথচ মালিকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) শিল্প পুলিশ যেভাবে শ্রমিক ও ছাত্রনেতাদের ওপর হামলা করেছে, তার জন্য এই সরকারই প্রধানত দায়ী থাকবে।’
গবেষক মাহা মির্জা বলেন, ‘এখানে কোনো শ্রমিক পিকনিক করতে আসেনি। কিন্তু শ্রমিকের প্রতি শ্রম ভবনও কোনো মানবিকতা না দেখিয়ে আলো বন্ধ করে রাখছে, বাথরুম ব্যবহার করতে দিচ্ছে না।’
লেখক ও গবেষক কল্লোল মোস্তফা বলেন, ‘শ্রমিককে গতকাল পুলিশ দিয়ে আক্রমণ করার পর শ্রম মন্ত্রণালয় ১২ জন মালিকের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিন্তু টিএনজেডের মালিক তো দেশেই নেই। যে দেশ ছেড়ে চলে গেছে, তাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কী অর্জন হবে? বরং মালিকের সম্পত্তি বাড়ি-গাড়ি বিক্রি করে শ্রমিকের বকেয়া পরিশোধ করতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা বলেছেন, শুধু বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস নয়, গতকাল আন্দোলনরত শ্রমিকের ওপর পুলিশের হামলায় আক্রান্ত শ্রমিকদের চিকিৎসার খরচ ও তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের যে গঠন হয়েছে, এর উদ্দেশ্য ছিল মালিককে রক্ষা করা। কিন্তু সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে শ্রমিক তাঁর অধিকার দাবির জন্য সমাবেশ করতে পারবে, আন্দোলন করতে পারবে। কিন্তু পুলিশ হামলা করে শ্রমিকদের সাংবিধানিক অধিকারকে ক্ষুণ্ন করেছে।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসক হারুণ উর রশীদ, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি কমরেড মোশরেফা মিশু, জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সমন্বয়ক ও জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম।