জাতীয় পার্টি (জাপা) নির্বাচনে অংশগ্রহণের কারণে সাংবিধানিক ধারা অক্ষুণ্ন রয়েছে বলে দাবি করেছেন দলটির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল।
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে মুজিবুল হক এসব কথা বলেন।
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমরা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করলাম। এই নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন সারা দেশে। আমরাও নির্বাচন করব কি না, সে অবস্থায় ছিলাম। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন। বিশেষ করে বিএনপিসহ অনেকগুলো দল নির্বাচনে আসে নাই। আবার আওয়ামী লীগসহ আমরা অনেক দল নির্বাচনে এসেছি। নির্বাচনে দেশের মানুষের মধ্যে অনেক কথা। আমাদের অনেকে বলছিলেন নির্বাচনে না আসার জন্য।’
চুন্নু বলেন, ‘যে সমস্ত বুদ্ধিজীবী বলেন জাতীয় পার্টি নির্বাচনে এসেছে আওয়ামী লীগের দালাল হিসেবে, বাজে ল্যাঙ্গুয়েজে বলেন! বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, আমরা নাকি আওয়ামী লীগের দালাল! আমার প্রশ্ন হলো—বিএনপিও তো নির্বাচনের আগে সর্বোচ্চ মহল থেকে আমাকে, আমার দলের নেতাকে সুপারিশ করেছে নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য। ও... নির্বাচনে না আসলে বিএনপি বলে ভালো, আসলে বলে খারাপ।’
মুজিবুল হক বলেন, ‘নির্বাচনে আসলাম! কী হলো, না-ইবা বললাম, অভিজ্ঞতা তো হলো! একটা কথা বলতে পারি—জাতীয় পার্টি নির্বাচনে আসার কারণে সাংবিধানিক ধারাকে আমরা অক্ষুণ্ন রাখতে পেরেছি। নির্বাচনে এসে মনে হয় আমরা ভুল করিনি।’
নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান পদ্ধতিতে শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সংখ্যানুপাতিক হারে প্রতিনিধিত্ব নির্বাচন করা হলে এটি সম্ভব হবে।’
মুজিবুল হক বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির ভাষণে সরকারের প্রশংসাসূচক বিষয়গুলো এসেছে। গরিব সাধারণ মানুষ যে মূল্যবৃদ্ধির কারণে অসহনীয় জীবন যাপন করছে, দুর্নীতি রোধ, টাকা পাচার বন্ধ, অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণ, সুশাসন কায়েম, নির্বাচনকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে কী করা যায়, এসব বিষয়ে ভাষণে কিছু দেখা যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই বছর আগে এক কেজি আটার দাম ছিল ৬০ টাকা। এখন ৬৫ টাকা। চিনি ছিল ৭০-৮০ টাকা, এখন ১২০-১৩০ টাকা। চাল, ডাল, শাক সবজিসহ সবকিছুর দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছে।’
বিরোধীদলীয় এ নেতা বলেন, ‘সারা দেশে পরিবহনে চাঁদাবাজি, ঘাটে-ঘাটে চাঁদা দিতে হয়! কৃষক মূল্য পায় না, শহরে এসে দাম বেড়ে যায়! মধ্যস্বত্বভোগী ও চাঁদাবাজেরা পায়।’
বড় বড় প্রকল্পে বিদেশি ঋণ নেওয়ার কথা তুলে ধরে চুন্নু বলেন, ‘ঋণের টাকায় অতিরিক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হয়েছে। কাজে লাগানো যাচ্ছে না। হাজার হাজার কোটি টাকা বসিয়ে রেখে দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলারের সংকট, রেমিট্যান্স কমা, টাকা পাচার, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। এসব কারণে দেশ অর্থনৈতিক সংকটে আছে।’
তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন হওয়া গেলে, টাকা পাচার, ভুয়া ঋণ বন্ধ করা গেলে, সুশাসন চালু না হলে, শুধু রাজনৈতিক স্টান্টবাজি জন্য বড় বড় প্রকল্প নেওয়া না হলে, সম্ভব সংকট থেকে বেরিয়ে আসা।’
জাপা মহাসচিব বলেন, ‘অবৈধভাবে পাচার করা টাকা ৮০ শতাংশ ব্যাংকের মাধ্যমে পাচার হয়। বিএফআইইউ বলেছে ব্যাংক না চাইলে টাকা পাচার সম্ভব নয়। খেলাপি ঋণের বড় অংশই কুঋণে পরিণত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পি কে হালদারসহ অনেক ব্যক্তি হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে নিয়েছেন ব্যাংক থেকে, কেউ দেখার নাই।’
মুজিবুল হক বলেন, ‘বিচার বিভাগে সংস্কার প্রয়োজন। এখন পর্যন্ত এখানে বড় সংস্কার হয়নি। বিচারপতি নিয়োগে আইন হয়নি, হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ যায়নি জেলায়। মানুষ যেন সহজে বিচার পায়, এ জন্য ব্যাপক পরিবর্তন দরকার।’