আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) আটকে পড়া দুই নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে মহাকাশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে ইলন মাস্কের ফ্যালকন ৯ রকেট। এ দুই মহাকাশচারী প্রায় ৩০০ দিন ধরে আইএসএসে অবস্থান করছেন। তাঁদের ফিরিয়ে আনতে শনিবার সকালে মহাকাশের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে স্পেসএক্সের মহাকাশযান। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বুধবার পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারেন এ দুই নভোচারী।
দুই নভোচারীকে ফিরিয়ে আনার ক্রু-১০ মিশনটি পরিচালিত হচ্ছে নাসা ও মাস্কের সংস্থার যৌথ উদ্যোগে। শনিবার ভোর ৪টায় যুক্তরাষ্ট্রের নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ফ্যালকন ৯ রকেটটি সফলভাবে উৎক্ষেপণ হয়েছে।
এদিকে রকেটের শীর্ষে থাকা ড্রাগন ক্যাপসুলে ছিলেন চারজন মহাকাশচারী। তাঁরা হলেন নাসার নিকোল আয়ার্স এবং আন্নে ম্যাকক্লেইন, রাশিয়ার রসকসমসের কিরিল পেস্কোভ এবং জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সির (জেএএক্সএ) তাকুয়া অনিশি।
বর্তমানে সুনিতা ও বুচ রয়েছেন ক্রিউ-৯ মহাকাশযানে। ক্রিউ-১০ মহাকাশে পৌঁছালে ক্রিউ-৯ থেকে এই চার মহাকাশচারী নতুন মহাকাশযানে উঠবেন। ক্রু-৯ থেকে ক্রু-১০-এ হস্তান্তর অনুষ্ঠানের পর উইলমোর ও উইলিয়ামস নাসার মহাকাশচারী নিক হেগ এবং রসকসমসের আলেকসান্দ্র গোরবুনোভ ১৯ মার্চ পৃথিবীতে ফিরবেন। উইলমোর ও উইলিয়ামসের মহাকাশে থাকার মোট সময় হবে প্রায় ৩০০ দিন। এটি এখনো রাশিয়ান মহাকাশচারী ভ্যালেরি পলিয়াকভের ৪৩৭ দিনের বিশ্ব রেকর্ডের তুলনায় কম হলেও অনেক দীর্ঘ সময়।
যদি সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চলে, তবে ক্যাপসুলটি আইএসএসে ডক করবে। গত বৃহস্পতিবার এই যানের হাইড্রোলিক সিস্টেমে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সে কারণে যানটি উৎক্ষেপণের সময় পিছিয়ে যায়।
গত বছরের জুন মাসে মাত্র আট দিনের সফরে মহাকাশে গিয়েছিলেন সুনিতা ও বুচ। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ওই মহাকাশযানে আর ফিরতে পারেননি তাঁরা। পরবর্তীতে ২৪ আগস্ট নাসা এই মিশনকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। প্রায় ১০ মাস ধরে মহাকাশে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে আটকে আছেন বুচ ও সুনিতা। কিছুদিন আগে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সুনিতাদের ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব দেন স্পেস এক্সের মালিক ইলন মাস্ককে। এ কারণেই ক্রিউ-১০-এর উৎক্ষেপণের দিন এগিয়ে আনা হলো বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
আজকের উৎক্ষেপণ ছিল ক্রু-১০ মিশনের তৃতীয় চেষ্টা। এর আগে ১২ মার্চ একটি হাইড্রোলিক সিস্টেম সমস্যার কারণে এবং ১৩ মার্চ রকেটের পথের ওপর উচ্চ বায়ু ও বৃষ্টির কারণে উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয়েছিল।
গত ৪ মার্চ আইএসএস থেকে সম্প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে উইলমোর বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত ছিলাম দীর্ঘ সময় থাকার জন্য, যদিও আমাদের পরিকল্পনা ছিল কম সময় থাকার। তবে মহাকাশযাত্রায় এটাই আমাদের কাজ—অজানা বা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া, আর আমরা সেটাই করেছি।’
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স