Ajker Patrika
হোম > বিজ্ঞান

শিকারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাণীর জিনগত তথ্যও প্রকাশ করে মাকড়সার জাল

অনলাইন ডেস্ক

শিকারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাণীর জিনগত তথ্যও প্রকাশ করে মাকড়সার জাল

মাকড়সা জাল বোনে শিকার ধরতে। তবে এখান থেকে মেলে বিভিন্ন প্রাণীর জিনগত তথ্যও। আশপাশের পরিবেশে বাস করা প্রাণীদের ডিএনএ জালে আটকে যায় বলেই এটা সম্ভব হয়। অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীদের গবেষণা বলছে, এর মাধ্যমে বিপন্ন বিভিন্ন বন্যপ্রাণী সম্পর্কে অনেক নতুন তথ্য পাওয়া যেতে পারে। 

ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার পার্থের দুটি এলাকা পার্থ জু এবং কারাকামিয়া উডল্যান্ড অভয়ারণ্য থেকে মাকড়সার জাল সংগ্রহ করেছেন গবেষকেরা। এখান থেকেই মিলেছে ৯৩ ধরনের বন্যপ্রাণীর জিনগত নিদর্শন। এদের মধ্যে আছে স্থানীয় ক্যাঙারু, কোয়েলা এবং বন্দী হাতি ও জেব্রা। আই সায়েন্স জার্নালে গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে এ তথ্য পাওয়া যায় বলে নিশ্চিত করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। 

পার্থের কাছে কার্টিন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মলেকুলার অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সের পিএইচডি গবেষক ও নিবন্ধনটির সহলেখক জশুয়া নিউটনের মতে, আমাদের চারপাশে কী প্রাণী রয়েছে তার ওপর নজর রাখার জন্য মাকড়সার জাল একটি কার্যকর উপায় হতে পারে। 

‘এই জালগুলো, যেগুলোকে প্রায়ই জীববৈচিত্র্য গবেষণায় উপেক্ষা করা হয়, জেনেটিক তথ্যের আধার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।’ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন নিউটন। 

‘প্রাণী শনাক্ত করার জন্য খুব সামান্য ডিএনএর প্রয়োজন হয়। এই সস্তা এবং নির্দোষ পদ্ধতিটি আমাদের স্থলের জীববৈচিত্র্যের অন্বেষণ এবং রক্ষায় একটি যুগান্তকারী বিষয় হয়ে উঠতে পারে।’ 

সমস্ত জীব ত্বকের কোষ, চুল বা শারীর থেকে বের হওয়া তরল পদার্থের আকারে ডিএনএ রেখে যায়। এই জেনেটিক উপাদান এনভায়রনমেন্টাল (পরিবেশগত) ডিএনএ বা ইডিএনএ নামে পরিচিত। 

বিভিন্ন ধরনের মাকড়সার জাল সংগ্রহ করেন গবেষকেরা। অস্ট্রাকানতে মিনাক্স মাকড়সা এদের একটি। ছবি: জশুয়া নিউটনের সৌজন্যে। বিজ্ঞানীরা বাতাসে প্রাণীর ডিএনএ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। ২০২২ সালে প্রকাশিত দুটি গবেষণায় ডেনমার্কের কোপেনহেগেন চিড়িয়াখানা এবং যুক্তরাজ্যের হ্যামারটন চিড়িয়াখানা পার্ক থেকে সংগৃহীত বাতাসের নমুনা থেকে একাধিক প্রাণীর ডিএনএ উদ্ধার করেছে। 

অস্ট্রেলিয়ান গবেষকদের গবেষণাটি ধারণাটিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। নমুনা সংগ্রহের জন্য ফ্যান বা এয়ার ফিল্টারের মতো যেকোনো সরঞ্জামের প্রয়োজনও পড়বে না। আর এই মাকড়সার জাল সংগ্রহ করাটাও অনেক সহজ। 

ইডিএনএর সঙ্গে জড়িত কৌশলগুলো ইতিমধ্যে বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা প্রাচীন মানব জনসংখ্যা বোঝার জন্য গুহার ধুলোবালুতে পাওয়া ইডিএনএ ব্যবহার করছেন। এদিকে আর্কটিক অঞ্চল থেকে পাওয়া ইডিএনএ প্রকাশ করেছে ম্যামথ এবং অন্যান্য বরফযুগের প্রাণী বিচরণের এলাকা। 

এটি সংরক্ষণে ব্যবহার করা হচ্ছে। কৌশলটি ব্লাইন্ড গোল্ডেন মোলের পুনরাবিষ্কারে ভূমিকা রেখেছে। বিশেষজ্ঞরা প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করার ৮৭ বছর পর ইডিএনএ ব্যবহার করে এর সন্ধান পান। 

কানাডার অন্টারিওর ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এলিজাবেথ ক্লেয়ার, যিনি ইডিএনএ নমুনা নিয়ে ২০২২ সালের একটি গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কিন্তু এই গবেষণায় জড়িত ছিলেন না, তিনি বলেন মাকড়সার জাল ব্যবহার করার ধারণাটি পছন্দ হয়েছে তাঁর। 

পার্থ চিড়িয়াখানায় যেসব প্রাণীকে শনাক্ত করা হয়েছে, এর মধ্যে আছে পিগমি মারমোসেটের মতো খুদে প্রাণী থেকে শুরু করে এশীয় হাতির মতো বিশাল প্রাণীও। যার মধ্যে আছে বৃক্ষচর লোমশ লেজের পশাম, মাটিতে ঘুরে বেড়ানো প্রাণী যেমন জিরাফ, নিশাচর প্রাণী, লোমশ, পালকযুক্ত ও আঁশযুক্ত প্রাণী এবং নগ্ন ত্বকের প্রাণী।

চিড়িয়াখানায় (৬১) প্রায় দ্বিগুণ প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে বনভূমির (৩২) তুলনায়। লেখকেরা বলেন, এই পার্থক্য সম্ভবত চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের ঘনত্ব বেশি থাকায় হয়েছে। 

বিভিন্ন ধরনের মাকড়সার জাল সংগৃহীত ডিএনএর প্রকার ও পরিমাণকেও প্রভাবিত করতে পারে বলে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। 

কারাকামিয়া সংরক্ষিত এলাকাটি চিড়িয়াখানা থেকে ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরে। দলটি সেখান থেকে অ্যারানেইডাই ও ফোনোনেসেডাই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত মাকড়সা থেকে বেশি দ্বিমাত্রিক বৃত্তাকার জাল সংগ্রহ করেছে। 

বিপরীতে, পার্থ চিড়িয়াখানায় সংগৃহীত বেশির ভাগ জালই ছিল ডেসিডাই এবং থেরিডিয়েডাই পরিবারের। এরা জটিল ও অনিয়মিত জাল পাতে। নিউটন বলেছিলেন যে বিভিন্ন ধরনের জাল নির্দিষ্ট ধরনের বিশ্লেষণের জন্য উপযুক্ত হতে পারে। 

‘ওরব মাকড়সাদের অনেকগুলো সকালে তাদের জাল নামিয়ে দেয় এবং রাতে পুনর্নির্মাণ করে।’ বলেন নিউটন। অর্থাৎ বিজ্ঞানীদের একটি নির্দিষ্ট সময় অনুসারে ডিএনএ সংগ্রহ করতে হয়। 

দলটির পরবর্তী লক্ষ্য মাকড়সার জালকে মাটি এবং জলসহ ডিএনএ সংগ্রহ করে এমন অন্যান্য উপকরণের সঙ্গে তুলনা করা। ‘আমি মনে করি ডিএনএ কতটা দূরত্ব ভ্রমণ করতে পারে এ বিষয়টিও এখনো অনেকটাই অজানা অজানা আমাদের।’ বলেন নিউটন।

নিকোটিন বা অ্যালকোহলের মতো আসক্তি তৈরি করে স্মার্টফোন: গবেষণা

সূর্যগ্রহণের সময় চাঁদে কী হয়, দেখতে গেল মার্কিন চন্দ্রযান

৩৬০ কোটি বছর আগে সমুদ্র ছিল মঙ্গলে, উপকূলরেখা শনাক্ত করল চীনা যান

১১ হাজার বছর পর আবার বরফে ঢেকে যাবে পুরো পৃথিবী: গবেষণা

পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য থেকে ব্যাটারি, রিচার্জ ছাড়াই চলবে বহু বছর

তীব্র ঠান্ডায়ও মেরু ভালুকের লোমে বরফ জমে না যে কারণে

ডুমস ডে ভল্টে যুক্ত হলো আরও ১৪ হাজার ফসল বীজ

গভীর মহাকাশে মূল্যবান ধাতুর সন্ধানে যাচ্ছে মহাকাশযান ওডিন

এক সারিতে আসবে সৌরজগতের ৭ গ্রহ, বিরল দৃশ্য দেখবেন যেভাবে

প্লুটো দিবস আজ, গ্রহের মর্যাদা হারালেও আগ্রহের কেন্দ্রে