অনলাইন ডেস্ক
আমাদের ছায়াপথ বা গ্যালাক্সির আকাশগঙ্গার কেন্দ্রে চুপিসারে লুকিয়ে থাকা বৃহদাকার কৃষ্ণগহ্বরের চারপাশে ঘূর্ণমান আলোকরশ্মির ছবি প্রথমবারের মতো ধারণ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌরমণ্ডল যে ছায়াপথে অবস্থিত, সেই আকাশগঙ্গার কেন্দ্রে চুপিসারে থাকা কৃষ্ণগহ্বরের নাম স্যাগিটারিয়াস এ। এর উপস্থিতি সম্পর্কে জানা থাকলেও এত দিন এর কোনো ছবি হাতে ছিল না। এবার সেই ছবিই তুলতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কৃষ্ণগহ্বরটির চারপাশে ঘূর্ণমান আলোকরশ্মির চিত্র ধারণ করা হয়েছে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপের (ইএইচটি) মাধ্যমে ধারণ করেছেন।
এত দিন পর্যন্ত কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কিত মানুষের বোঝাপড়া ছিল মূলত মহাকর্ষ বলনির্ভর। ছায়াপথ বা গ্যালাক্সিগুলোর কেন্দ্রে লুকিয়ে থাকা নক্ষত্রের অবস্থান তত্ত্বীয়ভাবে জানা গেলেও মহাকর্ষ বলের ফাঁদে আটকা পড়া এসব তারকা সম্পর্কে আর কোনো তথ্য ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার অধ্যাপক ফেরিয়াল ওজেলের বলেন, ‘স্যাগিটারিয়াস এ-এর কোনো আলোকচিত্র এত দিন আমাদের হাতে ছিল না। আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা এই কৃষ্ণগহ্বরের প্রথম ছবি এটি। এই আলোকচিত্র ধারণ সহজ কিছু ছিল না। ভীষণ চ্যালেঞ্জিং ছিল কাজটি, কারণ এটি প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়ায়।’
এবিসি নিউজ জানায়, স্যাগিটারিয়াস এ-এর ধারণ করা ছবির মধ্য দিয়ে আরও একবারের মতো বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে উল্লিখিত অনুমানগুলোর প্রমাণ মিলেছে। কয়েক দশক ধরে কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কিত যেসব ধারণা ও প্রমাণাদি তত্ত্বীয়ভাবে বিজ্ঞানীরা বলছিলেন, তার সমর্থন রয়েছে প্রথম তোলা কোনো কৃষ্ণগহ্বরের ছবিতে।
ইএইচটি দলের সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড অ্যান্ড স্মিথসোনিয়ান ও নেদারল্যান্ডসের র্যাপডবাউড ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্পদার্থবিদ সারা ইসোন বলেন, ‘কৃষ্ণগহ্বরের ছায়ার আকার যেহেতু এর ভরের সমানুপাতিক, সেহেতু আমাদের তোলা ছবিটি বলছে, স্যাগিটারিয়াস এ-এর ভর সূর্যের ৪০ লাখ গুণ। এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য যে, আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বে করা অনুমানের সঙ্গে ছায়াপথের কেন্দ্রে চালানো নোবেলজয়ী পরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া ভর মিলে গেছে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে ৫৩ আলোকবর্ষ দূরের এম-৮৭ নামের এক গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকা দৈত্যাকৃতির কৃষ্ণগহ্বরের ছবি প্রথম তুলেছিল ইএইচটি। কিন্তু আকাশগঙ্গার কেন্দ্রে থাকা স্যাগিটারিয়াস ছায়াপথের কেন্দ্রে থাকা কৃষ্ণগহ্বরটি আগেরটি চেয়ে একেবারেই আলাদা বলে মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে ঠিক কোথায় তারা পৃথক, সে বিষয়ে তাঁরা কিছু বলেননি।