পাখিরা কখনো কখনো বাড়তি খাবার লুকিয়ে রাখে। কিন্তু সব পাখির স্মৃতি অতটা প্রখর না হওয়ায় লুকানোর স্থানটি পরে আর খুঁজে পায় না। এ ক্ষেত্রে ছোট আকারের চিকাডিস প্রজাতির পাখিরা অনন্য। কারণ খাবার লুকিয়ে রাখার সময় প্রতিবার এই পাখিদের মস্তিষ্কে বারকোডের মতো স্মৃতি তৈরি হয়। এমনটাই জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের এক দল গবেষক।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে গবেষণা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, মাথায় কালো ছোপ যুক্ত চিকাডিস পাখিরা গরমকালে খাবার লুকিয়ে রাখে। এক জরিপে দেখা যায়, একটি ছোট পাখি প্রায় ৫০ লাখের মতো খাবারের টুকরা লুকিয়ে রাখতে পারে। কিন্তু এরপরও প্রত্যেকটি টুকরোর অবস্থান তারা নিখুঁতভাবেই মনে রাখতে পারে।
এই পাখিরা কীভাবে খাবার লুকিয়ে রাখার স্থান মনে রাখতে পারে— সেই কৌশল উদ্ঘাটন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা। কৌশলটি তাঁরা জার্নাল সেলে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেছেন।
গবেষণায় একটি স্থানে সূর্যমুখী বীজ বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে রাখা হয়। সেই স্থানে পাখিদের খাবার লুকানোর জন্য ১২০ টির মতো জায়গা ছিল।
পাখিদের আচরণ ও প্রতিটি স্থানে খাবারের সঞ্চয়, পুনরুদ্ধার বা লুকিয়ে রাখার কার্যকলাপ ভিডিওতে রেকর্ড করা হয়। পাখিদের মস্তিষ্কে একটি ছোট ডিভাইস প্রবেশ করানো হয়। মস্তিষ্কের হিপ্পোক্যাম্পাসে নিউরনের কার্যকলাপ রেকর্ড করার জন্য ডিভাইসটি ব্যবহার করা হয়। হিপ্পোক্যাম্পাস নির্দিষ্ট স্থানের স্মৃতি গঠনে সাহায্য করে।
দেখা গেছে, সূর্যমুখী বীজগুলো লুকানোর প্রত্যেকটি স্থানের জন্য পাখিদের মস্তিষ্কে আলাদা বার কোড তৈরি হয়।
একটি পাখি যখন একটি বীজ সংরক্ষণ করে বা পুনরুদ্ধার করে কেবল তখনই বারকোডগুলো দেখা যায়। গবেষক দলটি বলছে, নির্দিষ্ট ঘটনার স্মৃতি তৈরি ও কোনো এলাকার একটি মানসিক মানচিত্র তৈরি করার সময় পাখিদের মস্তিষ্কে ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়া দেখা যায়।
গবেষণায় মাধ্যমে জানা যায়, যখন কেউ একটি নির্দিষ্ট ঘটনার স্মৃতি তৈরি করে, তখন মস্তিষ্ক একটি এলোমেলো লেবেল তৈরি করে। এই লেবেল বিশেষ ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত তথ্য সংরক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়। বিষয়টি সুপার শপে প্রতিটি পণ্যের গায়ে থাকা লেবেল বা বারকোডের মতো। পণ্যের লেবেল স্ক্যান করলেই সেটি সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যায়।
গবেষকেরা বলছেন, এই ক্ষুদ্র সাধারণ পাখিদের মস্তিষ্ক ও মানসিক ক্ষমতা বেশ চমকপ্রদ!