আমাদের সৌরজগতের বাইরে বায়ুমণ্ডলসহ পাথুরে গ্রহের জন্য বছরের পর বছর ধরে অনুসন্ধান করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। অবশেষে তাঁরা এমন একটি গ্রহের খোঁজ পেয়েছেন। তবে গলিত পাথরের ওই গ্রহটিতে বাসযোগ্যতার কোনো আশা নেই।
বুধবার নেচার জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ওই গ্রহটিকে ‘সুপার-আর্থ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এটি এমন একটি পাথুরে গ্রহ যা আমাদের গ্রহের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বড় আর নেপচুনের চেয়ে ছোট। আরেকটি বিষয় হলো—গ্রহটি খুব বিপজ্জনকভাবে কাছাকাছি অবস্থানে থেকে আমাদের সূর্যের চেয়েও ছোট একটি নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। প্রতি ১৮ ঘণ্টায় একবার এই প্রদক্ষিণ সম্পন্ন হচ্ছে।
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের ইনফ্রারেড প্রক্রিয়ায় গ্রহটিতে একটি বায়ুমণ্ডলের উপস্থিতি দেখা গেছে। সম্ভবত ম্যাগমার বিশাল সমুদ্র থেকে নির্গত গ্যাস দিয়ে এই বায়ুমণ্ডল পূর্ণ।
এ বিষয়ে গবেষণার প্রধান লেখক ও নাসার বিজ্ঞানী রেনিউ হু বলেছেন, ‘বায়ুমণ্ডলটি সম্ভবত কার্বন ডাই অক্সাইড বা কার্বন মনোক্সাইডে পূর্ণ। তবে এতে জলীয় বাষ্প এবং সালফার ডাই অক্সাইডের মতো অন্যান্য গ্যাসও থাকতে পারে। বর্তমান পর্যবেক্ষণগুলো বায়ুমণ্ডলটির সঠিক গঠনকে চিহ্নিত করতে পারে না।’
রেনিউ জানিয়েছেন, তাদের প্রাপ্ত ওয়েব ডেটা গ্রহটির বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে এখনো সুস্পষ্ট ধারণা দিতে পারেনি। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি পৃথিবীর মতো পুরু কিংবা শুক্রের চেয়েও ঘন হতে পারে।
জানসেন (Janssen) নামের ওই গ্রহটি পৃথিবীর চেয়েও প্রায় ৮ দশমিক ৮ গুণ বড়। এর ব্যাস আমাদের গ্রহের প্রায় দ্বিগুণ। নক্ষত্রের খুব কাছাকাছি অবস্থানে থাকায় গ্রহটির পৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ১ হাজার ৭২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গ্রহটিতে বসবাসের আশা নেই দাবি করে গবেষণার সহ-লেখক ব্রিস-অলিভিয়ার ডেমোরি বলেছেন, ‘আসলে এটি সবচেয়ে উষ্ণতম পাথুরে আবিষ্কারগুলোর মধ্যে একটি। আমাদের গ্যালাক্সিতে অবকাশ যাপনের জন্য সম্ভবত আরও ভালো জায়গা রয়েছে।’
গ্রহটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৪১ আলোকবর্ষ দূরে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে অবস্থিত। আর এর নক্ষত্রটি মহাকর্ষীয়ভাবে একটি বাইনারি সিস্টেমে অন্য আরেকটি নক্ষত্রের সঙ্গে আবদ্ধ। এই দুই সঙ্গীর মধ্যে দূরত্ব পৃথিবী এবং সূর্যের দূরত্বের প্রায় হাজার গুণ। এক নক্ষত্র থেকে অন্যটিতে আলো পৌঁছাতে সময় লাগে অন্তত ৬ দিন।