নিয়মিত মদ্যপান লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। আবার এমন অনেকেই আছেন যারা নিয়মিত মদ্যপান করেন না, কিন্তু সপ্তাহের কোনো বিশেষ দিনে একটু বেশিই পান করে ফেলেন— তাঁদের জন্য বিপদের বার্তা নিয়ে এসেছে একটি গবেষণা। আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা।
এ বিষয়ে দ্য ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিভার বা যকৃতের সমস্যা বিশ্বজুড়ে অকাল মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২ থেকে ৩ ভাগ মানুষ এ ধরনের সমস্যায় ভুগছে। লিভারের সমস্যার জন্য একটি বড় কারণ মদ্যপান। করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে মদ্যপান জনিত মৃত্যুর হার ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
লিভার সমস্যার ক্ষেত্রে মদ্যপানের ধরন, বংশগত প্রবণতা এবং টাইপ-টু ডায়াবেটিস কীভাবে প্রভাব ফেলে তা দেখার জন্য সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা ইউকে বায়োব্যাংক থেকে ৩ লাখ ১২ হাজার ৫৯৯ জন সক্রিয় মদ্যপায়ীর তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। এতে দেখা গেছে, যারা সপ্তাহের কোনো বিশেষ মুহূর্তে ভারী মদ্যপান অর্থাৎ প্রায় ১২ ইউনিট পর্যন্ত মদ্যপান করেন তাদের লিভারে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা সাধারণের চেয়ে তিনগুণ বেশি। আর যাদের উচ্চ বংশগত প্রবণতা রয়েছে তাঁদের ঝুঁকি প্রায় ৪ গুণ এবং টাইপ-টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের ঝুঁকি ২ গুণ বেশি।
অন্যদিকে বংশগত প্রবণতার পাশাপাশি যারা কোনো বিশেষ দিনে মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানে জড়িত হন তাদের লিভারে সদস্যা হওয়ার সম্ভাবনা ৬ গুণ বেশি।
এ বিষয়ে গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের মহামারি ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের গবেষক লিন্ডা ফ্যাট বলেন, ‘অনেক গবেষণায় লিভার সমস্যার সঙ্গে মদ্যপানের সম্পর্ক খুঁজতে গিয়ে মদ্যপানের পরিমাণের ওপর জোর দেওয়া হয়। তবে আমরা মদ্যপানের পদ্ধতির ওপর জোর দিয়েছি এবং দেখেছি এটি লিভার সমস্যার ঝুঁকি পরিমাপ করার ক্ষেত্রে আরও ভালো সূচক।’
সহ গবেষক ড. গৌতম মেহতা বলেন, ‘প্রতি ৩ জনের মধ্যে মাত্র একজন আছেন যারা উচ্চ মাত্রায় মদ্যপান করেন—তাদের লিভারে গুরুতর রোগ হতে পারে। আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, ২১ ইউনিট মদ সারা সপ্তাহজুড়ে পান করার বদলে যদি তা গুটিকয়েক সেশনেই শেষ করে ফেলা হয়—তবে তা আরও বেশি ক্ষতিকর।’
ব্রিটিশ লিভার ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী পামেলা হিলি বলেন, ‘এই গবেষণাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটির মাধ্যমে জানা গেছে—আপনি সামগ্রিকভাবে কতটা পান করেছেন তা নয়, বরং আপনি কীভাবে পান করেছেন সেটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রচুর পরিমাণে পান করে ফেলা, দ্রুত পান করা কিংবা মাতাল হওয়ার জন্য পান করা আপনার লিভারের জন্য মারাত্মক পরিণতি নিয়ে আসতে পারে।’