যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করার প্রথম দিনেই টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই আদেশের মাধ্যমে টিকটককে বিক্রি বা বন্ধ করার জন্য গত বছর মার্কিন কংগ্রেসে পাস হওয়া আইনের কার্যকর ৭৫ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।
এই আদেশে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, আগামী ৭৫ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এই বৃহৎ সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপর বিক্রি বা বন্ধসংক্রান্ত আইনটি কার্যকর করার জন্য কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হোক।
আদেশে আরও বলা হয়েছে, এই সময়সীমা জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ প্রদানের পাশাপাশি লাখ লাখ আমেরিকান নাগরিকের ব্যবহৃত একটি যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মের আকস্মিক বন্ধ হওয়া এড়াতে সহায়ক হবে।
এ ছাড়া, আদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য প্রধান সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রযুক্তি কোম্পানি যেমন: অ্যাপল, অ্যালফাবেট গুগল ও ওরাকলের কাছে একটি চিঠি পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, টিকটক সম্পর্কিত কোনো আইনি লঙ্ঘন ঘটেনি এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে যে কোনো কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের কোনো দায়বদ্ধতা থাকবে না।
টিকটকের ওপর নির্বাহী আদেশের লক্ষ্য সম্পর্কে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেছেন, ‘এটি আমাকে টিকটক বিক্রি বা বন্ধ করার অধিকার দিয়েছে।’ তবে তিনি এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেননি বলেও জানিয়েছেন।
ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটি বন্ধ করার পক্ষে যাঁরা যুক্তি তুলে ধরেছেন, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগের কথা বলেছেন। তাদের মতে, টিকটকের মালিক প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সের মাধ্যমে চীনের সরকার যুক্তরাষ্ট্রের লাখ লাখ ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য গুপ্তচরবৃত্তি বা প্রচারণার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে।
প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প টিকটকের প্রতি এসব কারণে সমালোচনা করেছিলেন এবং নিজেই এটি নিষিদ্ধের চেষ্টা করেছিলেন। তবে পরে তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন, যার একটি প্রধান কারণ ছিল প্ল্যাটফর্মটিতে তার নিজস্ব জনপ্রিয়তা এবং গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এর ব্যবহারের সুযোগ। এ ছাড়া, টিকটকের একজন বিনিয়োগকারী এবং রিপাবলিকান দাতা জেফ ইয়াসের মাধ্যমে প্রভাবিত হওয়ার কারণেও তাঁর মতের পরিবর্তন হয়।
তবে কংগ্রেসের রিপাবলিকানরা এখনো তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে।
গত বছরের এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি নতুন আইনে স্বাক্ষর করেন। এই আইনে টিকটককে ১৯ জানুয়ারির মধ্যে একটি মার্কিন কোম্পানির কাছে বিক্রি করতে বলা হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে বাইটড্যান্স টিকটক বিক্রি না করলে যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। তবে বিক্রির প্রক্রিয়া চলতে থাকলে এই সময়সীমা ৯০ দিন পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।
এদিকে টিকটক বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে অ্যাপটির মালিক প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স।
এরই মধ্যে টিকটক কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে একটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান , যার মধ্যে রয়েছেন বিলিয়নিয়ার ফ্র্যাংক ম্যাককোর্ট ও কেভিন ও’লিয়ারি। ফ্র্যাংক ম্যাককোর্ট একসময় লস অ্যাঞ্জেলেস ডজার্স বেসবল দলের মালিক ছিলেন। আর কেভিন ও’লিয়ারি এবিসি মিডিয়ার ব্যবসায়িক রিয়্যালিটি শো ‘শার্ক ট্যাংক’-এ উপস্থিতির জন্য পরিচিত।
ট্রাম্পের একটি স্থগিতাদেশের জন্য আবেদন করার পর চলতি মাসের শুরুতে এ বিষয়ে শুনানি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট। মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নেওয়ার পরও বিচারকেরা আইনের পক্ষে থাকার মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তবে, বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্পের ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন পর্যবেক্ষকদের মতে, নির্বাহী আদেশ শুধু প্রেসিডেন্টের ইচ্ছার প্রকাশ, কিন্তু তা টিকটককে নিষিদ্ধ করার আইনি প্রভাব পরিবর্তন করবে না।