বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক টেক জায়ান্টরা আস্তে আস্তে ভ্যাটের আওতায় আসছে। সম্প্রতি ভ্যাট পরিশোধ ও ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়াসহ সরাসরি ভ্যাট সংক্রান্ত সেবা পেতে উদ্যোগ নিয়েছে আন্তর্জাতিক টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফট। এ জন্য তারা বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর (বিআইএন) নিয়েছে। অনলাইনে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রিয় এই টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটি বিআইএন নিবন্ধন পেয়েছে। ভ্যাট বিভাগ থেকে অনাবাসী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবসায় শনাক্তকরণ নম্বর (বিআইএন) নিয়েছে তারা। ঢাকা দক্ষিণ ভ্যাট কমিশনারেট মাইক্রোসফটকে এই নিবন্ধন দিয়েছে। সিঙ্গাপুরের ঠিকানা ব্যবহার করে মাইক্রোসফট রিজিওনাল সেলস পিটিই লিমিটেড নামে নিবন্ধন পেয়েছে তারা।
এর আগে ভ্যাট পরিশোধ ও ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়াসহ সরাসরি ভ্যাট সংক্রান্ত সেবা পেতে উদ্যোগ নিয়েছে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া বিষয়ক কোম্পানি ফেসবুক। এজন্য তারা বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর (বিআইএন) নিয়েছে। অনলাইনে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রিয় এই টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটি তিনটি পৃথক বিআইএন নিবন্ধন পেয়েছে। তারা যে তিন প্রতিষ্ঠানের নামে নিবন্ধন নিয়েছে সেগুলো হলো-ফেসবুক পেমেন্টস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ফেসবুক টেকনোলজিস আয়ারল্যান্ড লিমিটেড এবং ফেসবুক আয়ারল্যান্ড লিমিটেড।
ঢাকা দক্ষিণের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার প্রমিলা সরকার মাইক্রোসফট এবং ফেসবুকের বিআইএন নিবন্ধনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভ্যাট পরিশোধ ও ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়াসহ সরাসরি ভ্যাট সংক্রান্ত সেবা পেতে বিআইএন নেওয়ার বিষয়টি দেশের রাজস্ব খাতের জন্য একটি বড় অর্জন। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বেশ কিছু টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর এই ভ্যাট নিবন্ধনের বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছে প্রযুক্তি সংক্রান্ত বেশ কিছু সংগঠন। গত ২৫ মে বিআইএন নেয় জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগল। এর পরপর ভ্যাট নিবন্ধন নেয় ই–কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন ও বিশ্বসেরা বিনোদনধর্মী ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স।
অনুসন্ধান করে জানা যায়, এর আগে ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়া গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব ও মাইক্রোসফটের মতো আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি সংস্থা বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে বলা হয়, এসব কোম্পানিকে হয় বাংলাদেশে অফিস স্থাপন করতে হবে অথবা ভ্যাট এজেন্ট নিয়োগ দিতে হবে। এই এজেন্টরা ব্যবসা পরিচালনা বাবদ বাংলাদেশ সরকারকে রাজস্ব দেবে।
মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ অনুযায়ী ইউটিউব, ফেসবুক, গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানকে মূসক নিবন্ধন নিতে হবে। পাশাপাশি তাদেরকে বাংলাদেশে অফিস স্থাপন করতে হবে অথবা মূসক এজেন্ট নিয়োগ দিতে হবে। পরবর্তীতে ২০২০ সালের প্রথম দিকে আলাদা ভ্যাট নিবন্ধন নম্বরের আওতায় আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় এনবিআর। এ ছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে ইউটিউব, ফেসবুক, গুগল, নেটফ্লিক্স ও মাইক্রোসফটের মতো আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি সংস্থাগুলোকে সরাসরি নিবন্ধন নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। সে জন্য সরাসরি ভ্যাটের যাবতীয় সুবিধা দেওয়ার জন্য বিধি সংশোধন করে এনবিআর।
এ বিষয়ে আইসিটি বিভাগ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজস্ব খাতে টেক জায়ান্টদের অন্তর্ভুক্তি দারুণ ব্যাপার। তাদেরকে ভ্যাটের আওতায় আনা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স এর মতো প্রতিষ্ঠান বিআইএন নম্বর নেওয়ার অর্থ হলো সরকার এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সরাসরি রাজস্ব অর্জনের সুবিধা লাভ করলো। এর ফলে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহ বেশ বাড়বে বলে আশা করা যায়।