সৌদি আরব ঐতিহ্যগতভাবে তেলনির্ভর অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু বর্তমানে দেশটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। এগুলোর মধ্যে গেমিং ইন্ডাস্ট্রি অন্যতম। এ ক্ষেত্রে সৌদি আরব অতীতের তুলনায় অনেক বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে ‘ভিশন ২০৩০’ উদ্যোগের এই বিনিয়োগগুলোর লক্ষ্য দেশটির অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করা, প্রযুক্তি খাতে দক্ষতা বাড়ানো এবং বৈশ্বিক ইন্ডাস্ট্রিতে প্রভাব বিস্তার করা। এরই মধ্যে সৌদি পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড জনপ্রিয় মোবাইল গেম ‘পোকেমন গো’র নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান নিয়ানটিক ইনকরপোরেটেডের গেমিং ডিভিশন কিনতে ৩৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে।
সৌদি আরবের আগ্রহ গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে
বর্তমান বিশ্বে গেমিং ইন্ডাস্ট্রি একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক খাত হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এ বছর এই ইন্ডাস্ট্রি ২০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সৌদি আরব এই উত্থানশীল বাজারের অংশ হতে চায়। দেশটি তাদের তরুণ জনগণের মধ্যে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও সৃজনশীলতার উন্নয়ন করতে চায়। গেমিং ইন্ডাস্ট্রি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনের সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করছে। কেবল গেমিং সফটওয়্যার কিংবা হার্ডওয়্যার সাপোর্টে নয়, বরং গেমিং ডেভেলপমেন্ট, ই-স্পোর্টস এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগত ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করছে দেশটি। সৌদি আরব সরকারের ভিশন ২০৩০ পরিকল্পনার আওতায় অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য এবং প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের আর্থিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে।
পোকেমন গো কেনার কারণ
গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে সৌদি আরবের সর্বশেষ বড় পদক্ষেপ ছিল নিয়ানটিক ইনকরপোরেটেডের শেয়ার কেনা। নিয়ানটিক বিশ্বব্যাপী ‘পোকেমন গো’ গেমের জন্য পরিচিত। প্রায় ১০ বছর পরও বিশ্বের সর্বোচ্চ আয়কারী মোবাইল ফোন গেমগুলোর একটি পোকেমন গো। এর প্রায় ৩০ মিলিয়ন মাসিক সক্রিয় খেলোয়াড় রয়েছে। সৌদি আরবের গেমিং ইন্ডাস্ট্রির প্রতি আকর্ষণ কেবল বিনোদনের জন্য নয়। এর মাধ্যমে বড় অঙ্কের মুনাফা করতে চায় দেশটি।
সৌদি আরবের গেমিং শিল্পে ভবিষ্যৎ
সৌদি আরব বর্তমানে গেমিং শিল্পে বড় বিনিয়োগকারী। এ খাতের বড় বড় প্রতিষ্ঠানে তাদের পিআইএফের শেয়ার রয়েছে। দেশটি ই-স্পোর্টস প্রতিযোগিতার আয়োজনও করেছে। গত বছর ছিল ই-স্পোর্টস ওয়ার্ল্ড কাপ। এর পুরস্কার ছিল ৬০ মিলিয়নের বেশি ডলার। এ ছাড়া ২০২৭ সালে রিয়াদে অলিম্পিক ই-স্পোর্টস গেমসও আয়োজন করবে সৌদি আরব। দেশটি তার তেল সম্পদ থেকে অর্জিত বিপুল অর্থ গেমিং এবং অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ করছে। যেমন ২০২১ সালে ৩০০ মিলিয়ন ডলারে নিউক্যাসল ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব কিনেছিল দেশটি।
সৌদি আরবের আশা, তারা একদিন বিশ্বের গেমিং বাজারে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখলে সক্ষম হবে। সামনের দিনগুলোতে সৌদি আরবের গেমিং ইন্ডাস্ট্রির উন্নতি কেবল দেশটির অর্থনীতির জন্য নয়, বৈশ্বিক প্রযুক্তি ও গেমিং বাজারের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
সূত্র: বিবিসি