কুহেলী রহমান
যদি কেউ আপনাকে বলে, ভিডিও গেমের ভেতর প্রাণ যায় খেলোয়াড়ের, তবে বাস্তবেও তাকে মেরে ফেলবে যন্ত্র। নিশ্চয়ই হাসবেন আপনি। কিন্তু সত্যিই পালমার লাকি নামের এক ব্যক্তি আবিষ্কার করেছেন এমনই একটি ভি আর ভিডিও গেম ও আনুষঙ্গিক যন্ত্র। খেলাটির নাম সোর্ড আর্ট অনলাইন। একটি জাপানি উপন্যাসের আদলে তৈরি হয়েছে খেলাটি। এই গেমে খেলোয়াড়েরা একটি নার্ভগিয়ার ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট পরে একটি নতুন গেমে লগইনের পর একজন পাগল বিজ্ঞানীর সন্ধান পান, যিনি তাদের ভার্চুয়ালজগতে আটকে রেখেছেন। পালানোর জন্য খেলোয়াড়দের ১০০ তলা অন্ধকূপের পথে পথে লড়াই চালাতে হয়।
পামার তার ওকুলাস কোম্পনি ২০১৪ সালে ফেসবুকের কাছে ২০০ কোটি ডলারে বিক্রি করে দেয়। এরপর তার ভার্চুয়াল প্রযুক্তি মেটার ভিত্তি হিসেবে রিব্র্যান্ড করেন মার্ক জাকারবার্গ। প্রাণঘাতী প্রকল্পে জড়িত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ব্লগ পোস্টে পামার লিখেছেন, ‘আপনার বাস্তব জীবনকে ভার্চুয়াল জগতের সঙ্গে যুক্ত রাখার ধারণাটি আমাকে সব সময় উদ্দীপ্ত করেছে।’ আপনি সর্বোচ্চ স্তরে বাজি ধরেছেন এবং লোকজনকে মৌলিকভাবে ভাবতে বাধ্য করেছেন, তাঁরা কীভাবে ভার্চুয়াল জগৎ এবং এর ভেতরের খেলোয়াড়দের সঙ্গে বাস্তবের মতো যোগাযোগ করতে পারেন।’ তিনি আরও বলছেন, ‘নিখুঁত গ্রাফিকস একটি গেমকে আরও বাস্তবধর্মী হিসেবে দেখাতে পারে, তবে গুরুতর পরিণতির হুমকির পরিবেশই কেবল পারে একটি গেমকে প্রতিটি মানুষের কাছে বাস্তবসম্মত করে তুলতে।’
পামার মনে করছেন, জাপানের মতো দেশে অ্যানিমেশন এবং হালকা ঢঙের গল্পের সিরিজ সোর্ড আর্ট অনলাইন মানুষকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে আগ্রহী করে তুলছে।
পামারের উদ্ভাবিত প্রাণসংহারি হেডসেটটি দেখতে অনেকটা মেটা কোয়েস্ট প্রোর মতো। এই যন্ত্রের মধ্যেই প্রতিযোগী দেখতে পাবেন গেমের ভেতরের দৃশ্য। এই যন্ত্রের ওপরই প্রতিযোগীর কপাল বরাবর বসানো রয়েছে তিনটি যন্ত্র। এই যন্ত্রগুলো থেকে নির্গত হয় মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গ। খেলতে খেলতে গেমের ভেতর যদি পরাজিত ও নিহত হন প্রতিযোগী, তবে সেই যন্ত্র থেকে নির্গত তরঙ্গ এসে ঝলসে দেবে মাথার ঘিলু।
ভার্চুয়াল জগৎ তৈরি কাজের পাশাপাশি অস্ত্র নির্মাতা হিসেবেও বহু কাজ করেছেন পালমার। বিতর্ক তৈরি হতেই তাঁর সাফাই, খেলার জন্য আদৌ এই গেম তৈরি করেননি তিনি। বাজারেও আনা হচ্ছে না খেলার সামগ্রীগুলো। তবে পালমার এক ব্লগ পোস্টে বলেছেন, ‘সোর্ড আর্ট অনলাইন গেমে নার্ভগিয়ার একটি মাইক্রোওয়েভ ইমিটার দিয়ে খেলোয়াড়দের হত্যা করে। তবে আমি বেশ স্মার্ট লোক, আমি এই হেডসেটটিকে বিশাল যন্ত্রপাতির সঙ্গে যুক্ত না করে আসল কাজটি (ব্যবহারকারীকে হত্যা) করার কোনো উপায় বের করতে পারিনি।’
প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে কত কিছু করা সম্ভব, এই খেলা সে কথাই মনে করিয়ে দেবে—দাবি করেছেন পালমার লাকি।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান টাইমস